শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। গতকাল দিনটিকে দেশব্যাপী ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের এদিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সূত্র: বাসস।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়।
অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতির পিতার সমাধি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কেক কাটা, মিলাদ মাহফিল, মোনাজাত, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ প্রভৃতি। এসব কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করা হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময়ে বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল এ উপলক্ষে গার্ড অব অনার দেয়।
এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও শাজাহান খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়–য়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন।
পরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড-অব-অনার দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময়ে বঙ্গবন্ধুর নাতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।
পরে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলোয় বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়।
জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সারাদেশের সব সরকারি হাসপাতালে রোগীদের উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
এদিকে সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।