নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমার সীমান্তে একের পর এক গোলা নিক্ষেপের ঘটনা বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থানে সন্তোষ প্রকাশ করে কূটনীতিকরা আশ্বাস দিয়েছেন, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘে গেলে বাংলাদেশের উদ্যোগকে সহায়তা করবেন তারা।
মিয়ানমার সীমান্তের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্রিফ করতে গতকাল মঙ্গলবার চীন-জাপান ও পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের ডাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়।
গতকালের ডাকে আমন্ত্রিত বেশিরভাগ দেশের কূটনীতিক হাজির হলেও ছিলেন না চীনের কোনো প্রতিনিধি। কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খুরশেদ আলম। তিনি বলেন, বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মিসর, তুরস্ক, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশের কূটনীতিক অংশ নেন। মিয়ানমারের উসকানিতে পা না দিয়ে বাংলাদেশ ধৈর্য পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে এবং এই ইস্যুতে বাংলাদেশ জাতিসংঘে গেলে আমাদের উদ্যোগকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রদূতরা।
খুরশেদ আলম বলেন, সীমান্তে অব্যাহত উসকানিতে মিয়ানমার যেন ফায়দা নিতে না পারে, এজন্য রাষ্ট্রদূতদের পরিস্থিতি অবহিত করেছে বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ যে ধরনের গোলযোগই থাকুক না কেন, এ দেশের সীমানায় মিয়ানমারের গোলা, মর্টার শেল আসা অগ্রহণযোগ্য। এ বিষয়টিতে একমত হয়েছেন সব দেশের কূটনীতিকরা। তারা বলেছেন, তারা ঢাকার অবস্থান নিজেদের রাজধানীতে জানাবেন।
সীমান্তে পরিস্থিতি একই রকম রয়েছেÑউল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ওপারে গোলাগুলি এখনও থামেনি। মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নেপিদো যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বান্দরবানের ঘুমধুম ঘোনারপাড়া সীমান্তে শূন্যরেখায় মর্টারের গোলা এসে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে মোহাম্মদ ইকবাল (২৮) নামের এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হন। আহত হন আরও অন্তত আটজন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোকে তলব করা হয়। তিনি এলে বাংলাদেশের প্রতিবাদপত্র দিয়ে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে কোনো মর্টারের গোলা যেন আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে না পড়ে।
এর আগে একই ধরনের ঘটনার কারণে ৪ সেপ্টেম্বর এবং ২১ ও ২৯ আগস্ট মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। তবে মিয়ানমার বরাবরই এ ধরনের ঘটনার দায় চাপিয়ে আসছে সেখানে সংঘাতরত আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার ওপর। তাদের দাবি, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে এ ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে।
গত সোমবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীকে ডেকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।