Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 9:03 pm

জাতি বিডিআর ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাযজ্ঞকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মাথায় ২০০৯ সালে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে। জাতি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না।’ তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্মীদের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলারও নির্দেশ দেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরে বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি সেই ঘটনায় শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। খবর: বাংলা ট্রিবিউন।

প্রধানমন্ত্রী শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড বজায় রাখতে বিজিবি সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড যেকোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।…একটা কথা মাথায় রাখবেন। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন, চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশ আমাদের, দেশ যত উন্নত হবে আপনাদের পরিবারই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে। উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানসহ সব ধরনের সুযোগ পাবে। সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।’

বর্ডার গার্ড আইন ২০১০ পাসের পর এই বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গঠন করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্য অর্জনে।’

একটি পেশাগত ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেইÑউল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ’-এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জাতির পিতা যেভাবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন, আজকে আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না ইনশাআল্লাহ। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা মানুষের জন্য একটা ঠিকানা গড়ে দেয়ার পাশাপাশি সবার হাতে আজকে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ফ্রিল্যান্সিং, তরুণ প্রজšে§র জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ, সর্বক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে দেশকে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থা থেকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জš§শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। যদিও কভিড-১৯ মহামারির বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যাতে এই মন্দা না আসে, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। কারও কাছে হাত না পেতে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে আমরা নিজেরা নিজেদের মতোই চলব, মাথা উঁচু করে চলব।’

জাতির পিতার স্বপ্নপূরণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ই-ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বিজয়ের এই মাসে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর বিজিবি (তৎকালীন ইপিআর) সৈনিকদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ইপিআরের বেতার কর্মীরা ওয়্যারলেস যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে প্রচার করেছিল। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। বিজিবি শহিদদের মধ্যে দুজন বীরশ্রেষ্ঠ, আটজন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হন। এছাড়া এই বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন।

এর আগে সকালে বিজিবি সদর দপ্তরে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে প্যারেড কমান্ডারকে সঙ্গে নিয়ে একটি খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। পরে তিনি আধাসামরিক বাহিনীর জাতীয় পতাকাবাহী দলের সঙ্গে চারটি কন্টিনজেন্টের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং স্বাগত মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত বিজিবি সদস্যদের মধ্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিজিবি পদক, রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক, বিজিবি পদক-সেবা এবং ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক-সেবা বিতরণ করেন। পরে তিনি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন। তিনি ‘বিজিবি দিবস-২০২২’-এর বিশেষ দরবার অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেন।