নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও রংপুর-৩ (সদর ও সিটির আংশিক) আসনে দলটির প্রার্থী জি এম কাদের বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষ যদি মনে করে নির্বাচনটা ভালো হচ্ছে না, তখন আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবে, কী করা যায়!’
গতকাল বুধবার নিজ নির্বাচনী এলাকার রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টি শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টি থেকে অনেক প্রার্থী নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে সরে যাচ্ছেন, এমন কথার জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে কুলাতে পারছেন না। পরিবেশ ভালো হচ্ছে না, হুমকিও থাকতে পারে। যেকোনো কারণেই হোক, তারা সরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীরা এখনও বলছেন, তারা ভালো করবেন। তাছাড়া বিপুল প্রার্থী সরে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। যখন সরে যাবেন, তখন বলা যাবে। তবে সরে গেলে আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। তারপরও আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার চেষ্টা করছি।’
নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ খুব বেশি খারাপ বলা যাবে না। তবে ভোটারদের যে আশঙ্কা, তা উড়িয়ে দেয়ার মতো না। নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত বলছে, ঠিক আছে এবং ঠিক থাকবে। আমরা সেই বিশ্বাস নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কী হয়।’
দলগতভাবে জাতীয় পার্টি কতটি আসন পেতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘আমি এখনও সেই হিসাব করিনি, কতটা পেতে পারে, কতটা পাবে না। এখন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনটা কেমন হবে, সেটাও আমরা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটা কীভাবে হয়? ফলাফল কীভাবে ঘোষণা করা হয়? এগুলো দেখে আমরা বুঝতে পারব, আমরা কয়টা সিট পেতে পারি।’
জাতীয় পার্টির অন্য প্রার্থীরা প্রচারণায় কেন অংশ নিচ্ছেন না? এমন প্রশ্নের জি এম কাদের বলেন, ‘যাওয়ার মতো প্রয়োজন হয়নি। যেখানে যাওয়ার, সেখানে যাচ্ছি। তবে অন্য নির্বাচনের মতো এই নির্বাচন সেইভাবে হচ্ছে না। প্রার্থীরা নিজেরাই প্রচারণাসহ অন্যান্য কাজ করছেন।’
এদিকে হবিগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চার প্রার্থী। তারা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহযোগিতা ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা-১ ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জাপার মনোনীত দুই প্রার্থী বুধবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির হল রুমে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
তার আগে মঙ্গলবার হবিগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী শংকর পাল ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ওদিকে কানাইঘাট-জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাব্বির আহমদ। গতকাল বিকাল চারটায় সিলেট নগরীর পূর্ব জিন্দাবাজারে জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
এখন পর্যন্ত সিটেলে বিভাগে সাব্বির আহমদসহ জাতীয় পার্টির তিন প্রার্থী ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান। অন্য দুইজন হলেনÑ সুনামগঞ্জ-১ আসনে আব্দুল মান্নান তালুকদার ও হবিগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী শংকর পাল।
সংবাদ সম্মেলনে সিলেট-৫ আসনে জাপার প্রার্থী সাব্বির আহমদ বলেন, ‘সরকার অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিলেটে এসেও একই কথা বলেছিলেন।’
‘তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির কর্মী ও ভোটাররা শঙ্কিত। প্রার্থী হিসেবেও আমি নানাভাবে হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছি। মাঠে সে রকম পরিবেশ পাচ্ছি না; তাই নির্বাচন করা খুবই কঠিন।’
৩০ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিলেট সার্কিট হাউসে সব প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে সময় আমরা বিভিন্ন অভিযোগ দিয়েছি; তিনিও বিষয়টি নোট করেছেন। অভিযোগ দেয়ার পরও নির্বাচনের পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করার কোনো পরিবেশ নেই, তাই নির্বাচন বয়কট করেছি।’
নির্বাচনী সমঝোতার অংশ হিসেবে জাপাকে ২৬টি আসনে ছাড় দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে নৌকার কোনো প্রার্থী নেই। জাতীয় পার্টির নেতারা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সারাদেশে মোট ২৮৩টি আসনে লড়াই করছেন- এমনটি জানিয়েছিলেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ।
গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দলের নেতৃত্বের ওপর দোষ চাপিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বুধবার রংপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিডিয়ার সামনে আমাদের দোষ দিয়ে যারা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন তা দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই কাজ করছেন। যারা নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছেন, তারা নিজেদের স্বার্থে সরে যাচ্ছেন। এগুলো যাচাই-বাছাই করে আগামীতে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’