আবদুল্লাহ আল নোমান: বিকাল থেকেই সিলেট শহরের কাজীরবাজার সেতুতে বেড়ে যায় পর্যটকদের আনাগোনা। তাদের বেশিরভাগই শহরের বাসিন্দা। নগর জীবনের অবসাদ ভুলতে সুরমাপাড়ে সময় কাটান তারা। সুন্দর সময় কাটানোর পাশাপাশি তাদেরই অনেকে নানাভাবে সুরমা নদীর দূষণকে করছেন ত্বরান্বিত।
সুরমার দূষণ রোধে করণীয় কী? এ ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ‘জাতীয় নদী অলিম্পিয়াড ২০১৬’র চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় সেরা প্রকল্পের পুরস্কার অর্জন করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের দল। ‘স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুরমা নদীর দূষণরোধ’ শীর্ষক প্রকল্প তাদের দিয়েছে সেরার মর্যাদা। দলের দলনেতা নৃবিজ্ঞান বিভাগের আতিক রহমান। বাকি সদস্যরা হলেন তৌফিক নিহাল, নাজমুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম আফরান, মোহাম্মদ শাহ পরান, ইফরান হাসান, জুনায়েদ শেখ, সুশান্ত গুপ্ত, সাইফুল ইসলাম শিপু ও তাসফিয়া শহিদ। সবাই শাবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগে পড়ালেখা করছেন। প্রতিযোগিতায় ২য় ও ৩য় হয় যথাক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
‘জানবে যদি, জাগবে নদী’ স্লেগানকে ধারণ করে রিভারাইন পিপল ও সমকাল সুহৃদ সমাবেশ যৌথভাবে জাতীয় নদী অলিম্পিয়াড আয়োজন করে। বাংলাদেশে এটাই প্রথম কোনো জাতীয় নদী অলিম্পিয়াড। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলে বিভাগীয় পর্বের প্রতিযোগিতা। এ বছরের ২২ জুলাই রাজধানীর পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) মিলনায়তনে হয় মূল পর্ব।
শাবিপ্রবি দলটির দলনেতা আতিক রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজটা মূলত কম খরচ ও কম সময়ে টেকসই উন্নয়নের ধারণা থেকে করা। সচেতনতা বাড়ানোর মাধমে যদি মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আনা যায়, তবেই সমাজ বদলাবে।’ নদীর প্রতি যে মানুষের দায়িত্ব আছে, তা জানানোই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। নানাবিধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে লোকজনকে সচেতন করা হয় প্রকল্পের মাধ্যমে।
মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তরুণরা এগিয়ে এসেছেন। দলের আরেক সদস্য মোহাম্মদ শাহ পরান বলেন, ‘অলিম্পিয়াডের নির্বাচিত সেরা প্রকল্পটির সফলতার ওপর এ অঞ্চলের নদীতীরবর্তী মানুষের জীবনযাত্রা, নদীভাবনা ও নদীসংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’
দেশসেরা প্রকল্পের পুরস্কার জেতায় উচ্ছ্বসিত দলের সবাই। তারই প্রতিধ্বনি যেন সুশান্ত গুপ্তের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করাটা দারুণ ব্যাপার। জাতীয় নদী অলিম্পিয়াডের চূড়ান্ত পর্বে দলগত সাফল্য শাবিপ্রবি পরিবারের জন্য বিশেষ কিছু। সে সঙ্গে নদীর জন্য কিছু করতে পারার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।’
প্রতিযোগিতার শর্ত ছিল কীভাবে কম খরচে, স্থানীয় লোকজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নদী বাঁচাতে ভূমিকা রাখা যায় সে দিকটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। সেরা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে আয়োজকরা।
Add Comment