পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও প্রচার ক্যাটেগরিতে জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৮তে ভূষিত হয়েছে দেশের প্রথম ও একমাত্র প্রজাপতি বিশেষায়িত ‘বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশ লিমিটেড’। ইন্ট্রাকো গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এটি। পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও প্রচারে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদক দেওয়া হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদকটি নেন ইন্ট্রাকো গ্রুপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াদ আলী।
এর আগে পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখার জন্য বাটারফ্লাই
পার্কটিকে এইচএসবিসি-ডেইলি স্টার ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ড-২০১২তে ‘ক্লাইমেট চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। এছাড়া ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতর থেকে পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও প্রচার এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘বিভাগীয় পরিবেশ পদক’ দেওয়া হয়।
‘সেভ দ্য বাটারফ্লাই, সেভ দ্য আর্থ’ এই থিম নিয়ে ২০১২ সালে চট্টগ্রামে গড়ে তোলা হয় পার্কটি। কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষা এই পার্ক চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমির কাছাকাছি এয়ারপোর্টের পাশে নির্মাণ করা হয়। প্রখ্যাত প্রজাপতি বিশেষজ্ঞ ড. শফিক হায়দার চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় পার্কটি। এটি নির্মাণের সময় নজর রাখা হয়েছে বাস্তুসংস্থানের দিকে। পার্কের সব ধরনের ল্যান্ডস্কেপ, স্থাপনা ও কাঠামোতে রাখা হয়েছে পরিবেশসহায়ক সবুজ ডিজাইন। উদ্বোধনের সময় পার্কটি সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ও একমাত্র জীবিত প্রজাপতির পার্ক হিসেবে যাত্রা করে।
পার্কটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৩ প্রজাতির প্রজাপতির প্রজনন করানো সম্ভব হয়েছে। প্রজননকৃত ১৭ হাজার প্রজাপতির মধ্যে আট হাজারের বেশি প্রজাপতি মুক্ত পরিবেশে উম্মুক্ত করা হয়েছে। পার্কে রয়েছে বাস্তুসংস্থান সহায়ক বাগান ও প্রজাপতিসহায়ক ২৫০ প্রজাতির ২০০০ গাছ। পার্কটিকে সাজানো হয়েছে কয়েকটি থিমে। এগুলো হচ্ছে জাদুঘর, সংরক্ষণাগার, গবেষণাগার, ফার্ন ল্যান্ড, এডুকেশন এলাকা, কিডস জোন, সাফারি জোন ও লেকসাইড এলাকা।
প্রতিবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসে শোভাযাত্রা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি উম্মুক্তকরণ ও আলোচনা সভা আয়োজনের মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে পার্কটি। এছাড়া পরিবেশ ও প্রজাপতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর শিশু দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ঈদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উৎসব পালন করা হয়। বিশেষ দিবসগুলোয় শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, র্যালি ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী পার্কটি পরিদর্শন করে এবং শিক্ষা সফর কার্যক্রমে অংশ নিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং এর কারণ ও সমাধানের উপায় সম্পর্কে আলোচনা সভার আয়োজন করার মাধ্যমে তাদের জ্ঞান বৃদ্ধি ও করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা হয়। এখন পর্যন্ত আয়োজিত আলোচনা সভার সংখ্যা প্রায় ৫০। পার্কটি প্রতি বছর পর্যটন মেলায় অংশ নিয়ে প্রজাপতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে আসছে। মেলায় বিলুপ্ত প্রজাপতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও ছবিসংবলিত লিফলেট বিতরণ, তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শনের মাধ্যমে এই সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট তথ্য
তিন একর জায়গা নিয়ে দর্শনার্থীদের নজর কাড়তে বাহারি রঙের জীবিত অসংখ্য প্রজাপতি নিয়ে নির্মিত হয়েছে পার্কটি। এখানে জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন, প্রজাপতি জাদুঘর, প্রজাপতি গবেষণাগার, প্রজাপতি প্রজনন ও উম্মুক্তকরণসহ প্রজাপতির খাদ্য উপযোগী বনায়ন করা হয়েছে। চারপাশের পরিবেশ, লেক ও বাসস্থান বিবেচনায় প্রাকৃতিক বনায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পার্কটিতে জীবন্ত প্রজাপতি উম্মুক্তভাবে প্রদর্শনের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে ‘বাটারফ্লাই জোন’। তাছাড়া বাটারফ্লাই মিউজিয়ামে প্রজাপতি ও পরিবেশ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। প্রজাপতির উৎপাদন, জীবনচক্র, আহার পদ্ধতি, বেড়ে ওঠা, প্রজাপতির বিভিন্নতা, বাসস্থান, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রভৃতি তথ্যে সমৃদ্ধ এই জাদুঘর। বিভিন্ন প্রজাপতির বিভিন্ন তথ্য প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়। যেমন পরিবেশকে প্রজাপতি কীভাবে উপকার করে, তাদের শত্রু, জীবনচক্রসহ নানা তথ্য সংরক্ষণ-সংগ্রহ করে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে পার্কটিতে। পার্কে শিক্ষা সফরে আগতদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক দ্বারা গাছপালা, প্রজাপতির উৎপাদন, জীবনচক্র, আহার পদ্ধতি, বেড়ে ওঠা, প্রজাপতির বিভিন্নতা, বাসস্থান, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রজাপতির গুরুত্বের ওপর ধারণা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের প্রজাপতি জাদুঘর, গবেষণাগার ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক জ্ঞান দেওয়া হয়।
দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও প্রচারে প্রজাপতির জীবনচক্র, পরিবেশে প্রজাপতির অবদান ও বাটারফ্লাই পার্কের ভূমিকা বিষয়ে তথ্যচিত্র ও প্রতিবেদন করেছে। পরিবেশে প্রজাপতির গুরুত্ব ও ভূমিকা বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ২০টির অধিক মৌলিক লেখা, প্রবন্ধ ও অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করছে।
পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প বিকাশে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে বাটারফ্লাই পার্ক বাংলাদেশ। ভিন্নধর্মী পার্ক হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করায় এখানে প্রতিবছর দেশি-বিদেশি অনেক গবেষক, শিক্ষার্থী ও দর্শণার্থীর আগমন ঘটে। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে নিকটতম হোটেল ও পর্যটন সম্পর্কিত স্থানগুলো, যা পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখছে।