আব্দুল্লাহ আল নোমান: দুটি দৃশ্য চিন্তা করুন তো। ছোট এক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি। এর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। অদূরে সুউচ্চ পাহাড়ের ওপরে বিছানো মেঘের পরশ। সে সঙ্গে পাহাড়ের বুকচিরে হালিখানেক ছোট-বড় ঝরনা বেয়ে নামছে স্বচ্ছ পানি। কী অনিন্দ্যসুন্দর সে দৃশ্য, তাই না?
পরের দৃশ্যটি আরও সুন্দর। আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, তার ডানদিকে চুনাপাথরের পাহাড়। সামনে একটা ছোট্ট হ্রদ। বাম দিকটায় সবুজ ঘাসে মোড়ানো উঁচু-নিচু টিলা। টিলার ওপরে উঠে দক্ষিণে তাকালেই বিশাল এক হাওরের জলরাশি।
প্রথমে চোখ বুজে যে দৃশ্যটি কল্পনা করেছিলেন, তা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বারেকটিলায় দাঁড়িয়ে জাদুকাটা নদী ও ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের। দ্বিতীয়টি একই উপজেলার নীলাদ্রি লেকের দৃশ্য। জেলা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বারেকটিলার অবস্থান। নীলাদ্রির দেখা পেতে পেরোতে হয় আরও কিলো বিশেক পথ।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আট বন্ধু মিলে গত ৬ জুলাই যাই প্রকৃতির আরও কাছাকাছি। নিজের বাড়ি সুনামগঞ্জ বলে এসব জায়গায় আমার বিচরণ থাকলেও প্রথমবারের মতো সেদিন এখানে বেড়াতে গিয়েছিল কয়েক বন্ধু। ওইদিন সকাল ৮টায় সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্টেশন থেকে রওনা দিয়ে বন্ধুরা সুনামগঞ্জের আব্দুজ জহুর সেতুতে পৌঁছায় ১০টার দিকে। সেখান থেকে আমিও দলটির সঙ্গী হই। ঈদের ছুটিতে ‘হোমগ্রাউন্ড’র সুবিধা নিই, আরকি! সোয়া ১১টায় পৌঁছে যাই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত লাউড়ের গড় গ্রামের জয়বাংলা বাজারে।
তিনটি স্পটেই যেহেতু একই রাস্তায় যেতে হয়, তাই আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্রথমে নীলাদ্রি গিয়ে ফেরার পথে বারেকটিলা ও জাদুকাটায় সময় কাটাবো। বাজার থেকে মোটরসাইকেলে তাই সোজা নীলাদ্রির পথে যাত্রা করি। খেয়া নৌকায় জাদুকাটা নদী পার হয়ে বারেকটিলার উঁচু-নিচু পথ ধরে বাইক চললো নীলাদ্রির পথে। পৌনে এক ঘণ্টা পর পৌঁছালাম গন্তব্যে।
ক্যামেরায় স্মৃতি ধরে রাখার পাশাপাশি নীলাদ্রীর স্বচ্ছ জলে নৌভ্রমণের ইচ্ছা পূরণ হয় সবার। মাঝি জানাচ্ছিলেন, ছোট্ট এ জলাধারের গভীরতা ৫০ ফুটের কম নয়! সৌন্দর্যের বিশালতার মতো যেন তার গভীরতা! ঘণ্টা দেড়েক সময় কাটিয়ে আবার বাইকে চেপে বসলাম। গন্তব্য বারেকটিলা ও জাদুকাটা নদী। মূলত তখন থেকেই আমাদের ফেরার পালা। বারেকটিলায় এসে ছোট্ট যাত্রাবিরতিতে চা-নাস্তা সেরে ঘুরতে বের হলাম। এ টিলার ওপর থেকে জাদুকাটার রূপ দেখা যেন পাখির চোখে জাদুকাটার সৌন্দর্যে বিমোহিত হওয়া।
এখান থেকে বিকাল ৩টায় আবার আপন নীড়ের পথ ধরি সবাই। আবারও মোটরসাইকেল। শেষ হয়ে এলো আনন্দ যাত্রা!
কীভাবে যাবেন
রাজধানীর সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে শ্যামলী, এনা, হানিফ, মামুন, হানিফ পরিবহনের বাসে সুনামগঞ্জ শহরে ঢোকার আগেই দেখা মিলবে আব্দুজ জহুর সেতু। শুধু জাদুকাটা ও বারেক টিলা ভ্রমণ করতে চাইলে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত যান কিংবা লেগুনায় যেতে পারবেন। সেতু থেকে জয়বাংলা বাজারে পৌঁছাতে জনপ্রতি গুনতে হবে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
নীলাদ্রি লেকে যেতে চাইলে আব্দুজ জহুর সেতু থেকে মোটরসাইকেলে সরাসরি যেতে পারবেন অথবা সিএনজি বা লেগুনায় চড়ে জয়বাংলা বাজারে গিয়ে আবার মোটরসাইকেলে উঠতে হবে। সেতু থেকে নীলাদ্রিতে পৌঁছতে ভাড়া পড়বে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা। জয়বাংলা বাজার থেকে গেলে লাগবে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। একটি মোটরসাইকেলে দুজন যাত্রী যাওয়া যায়।
খেয়াল রাখা দরকার সুনামগঞ্জ শহর থেকে যাত্রার পথটুকু খুব একটা সুখকর নাও হতে পারে। স্পটের কাছাকাছি আবাসন সমস্যা রয়েছে। তাই রাতযাপনের জন্য জেলা শহরই উত্তম। জাদুকাটা থেকে তিন কিমি দূরে বাদাঘাট বাজারে কয়েকটি হোটেল আছে।