মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ:পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ জনগণের আগ্রহ তলানিতে নেমে গেছে, যে কারণে আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে বিও খোলার প্রবণতা। গত মাসে পুঁজিবাজারে নতুন বিও খোলা হয়েছে ২০২টি, ২০১০ সালের পর যা (নতুন বিও অ্যাকাউন্ট) সর্বনিম্ন। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ডিসেম্বর শেষে পুঁজিবাজারে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩০১টি, জানুয়ারি শেষে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৫০৩টি। অর্থাৎ জানুয়ারিতে বিও বেড়েছে ২০২টি। এদিকে জানুয়ারি শেষে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ৮১৮টি। আর নারীদের রয়েছে ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৪টি। এছাড়া কোম্পানির বিও রয়েছে ১৩ হাজার ২০৬টি।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজার কখনও দীর্ঘমেয়াদিভাবে ভালো থাকেনি, যে কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ অনেক কমে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। যে কারণে নতুন বিও খোলার সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। এছাড়া নতুন আইপিও কম আসছে। এলেও এখান থেকে লাভবান হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে নতুনরা বাজারে আসতে ভয় পাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজার ভালো থাকলে সাধারণত বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ে। আবার কোনো কারণে বাজারে মন্দা পরিস্থিতি দেখা দিলে এর সংখ্যা কমে যায়। আমি মনে করি বাজার ভালোর দিকে যাচ্ছে। এই ধারা চলতে থাকলে আবারও বিও অ্যাকাউন্ট বাড়বে।
মূলত ২০১০ সালের পর থেকে বিও অ্যাকাউন্ট উল্লেখযোগ্যহারে কমতে থাকে। বর্তমানে অর্ধেকের বেশি অ্যাকাউন্ট হচ্ছে শেয়ারশূন্য। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে মোট বিও’র মধ্যে শেয়ারশূন্য এবং ব্যবহার করা হচ্ছে নাÑএমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি।
গত বছর সময়মতো বিও ফি পরিশোধ না করায় বাতিল হয়ে গেছে প্রায় আড়াই লাখ অ্যাকাউন্ট। সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সেইসঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, বর্তমানে বাজারচিত্র পরিবর্তিত হয়েছে। তাছাড়া প্রায় প্রতি মাসেই রয়েছে আইপিও, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারে ফিরে আসছেন।
নিয়মানুযায়ী জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এই ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।