Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:37 am

জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়েছে ৩৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন করে মুনাফার হার নির্ধারণের পর টানা তিন মাস ধরে কমে আসছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। তবে বছরের প্রথম মাসে (জানুয়ারি) হঠাৎ বিক্রি বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন গ্রাহক, যা আগের মাসের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। কারণ ডিসেম্বরে বিক্রির পরিমাণ ছিল সাত হাজার ৩৬২ কোটি টাকা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের আগস্টে নতুন করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণের পর অক্টোবর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও নিট ঋণ কমেছিল। নতুন বছরে অনেক গ্রাহকের ব্যাংকের এফডিআরের মেয়াদ শেষ হয়েছে। গ্রাহক সেই টাকা তুলে নতুন করে সঞ্চয়পত্র কিনেছে। এতে সঞ্চয়পত্রে বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের আগস্টে সরকারের সঞ্চয়পত্রে নিট ঋণের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। এক মাস পর সেপ্টেম্বরে নিট ঋণ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, অক্টোবরে এসে ব্যাপক কমে নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৭৬৬ কোটি টাকা। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল নভেম্বরেও। কারণ নভেম্বরে নিট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এসে এ খাত থেকে একটাও নিট ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো পরিশোধ করেছে ৪৩৬ কোটি টাকা। তবে নতুন বছরে এসে পুরো চিত্র পাল্টে গেছে, এক মাসের ব্যবধানে আড়াই হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ বেড়েছে।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের সুদহার কমানোর ফলে গত কয়েক মাসে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তবে নতুন ২০২২ সালের শুরুতে গ্রাহকের যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, আমার মনে হয় বিক্রি আরও বাড়বে। অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী আমানত রেখেছিল, বছরের শেষে সেই টাকা নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ায় তুলে ফেলেছে। গ্রাহক নতুন করে সেগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছে।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে এক শতাংশ এবং ৩০ লাখ থেকে ৪৫ লাখ টাকা বা এর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দুই শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয় সরকার।

এর পরের মাস থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ এসেছিল ১১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ কমে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকায় নেমে আসে। নভেম্বরে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ এসেছিল আট হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এ খাতের বিনিয়োগ আরও কমে সাত হাজার কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে। জানুয়ারিতে এসে তা অনেকটা বেড়ে ৯ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকার বিক্রি হয়।

তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৬১ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা মোট বিনিয়োগ আসে সঞ্চয়পত্রে। ওই সময় পুরোনো সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকার ব্যয় করে ৪৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। ফলে এই সাত মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ আসে ১২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সেই হিসেবে অর্থবছরের সাত মাসে সঞ্চয়পত্রের লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ শতাংশ ঋণ নিয়েছে সরকার।

প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছিল ৪১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে এ খাতের ঋণ বাড়তে থাকায় ওই অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে সঞ্চয়পত্রের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু ওই লক্ষ্যমাত্রারও বেশি ঋণ আসে অর্থবছর শেষে।