নিজস্ব প্রতিবেদক: জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে কভিড-১৯-এর ডেল্টা ধরনের জায়গাটি সম্পূর্ণভাবে দখল করে নেয় ওমিক্রন।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) ভাইরোলজি ল্যাবে বিভিন্ন নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে এই তথ্য জানা গেছে। গতকাল আইসিডিডিআর,বি প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৫ থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহর থেকে ২৪টি কভিড আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। জিনোম সিকোয়েন্স করে এর মধ্যে ৯২ শতাংশ নমুনায় ওমিক্রন ও ৮ শতাংশ নমুনায় ডেল্টার ধরন পাওয়া গেছে। ওমিক্রন শনাক্ত হওয়া নমুনার মধ্যে উপধরন বিএ.২ সবচেয়ে বেশি বলে চিহ্নিত করা গেছে।
এদিকে গত জানুয়ারিতে কভিড-আক্রান্ত রোগীদের ৮০ শতাংশের দেহে ওমিক্রন পাওয়া গেছে বলে আলাদা দুটি গবেষণায় উঠে এসেছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর সারাদেশে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) নিজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নমুনায় এমনটা দেখতে পেয়েছে। আইইডিসিআর’র অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে গত ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে সংগ্রহ করা নমুনার জিন বিন্যাস বা জিনোম সিকোয়েন্সের ফল তুলে ধরা হয়।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশের ৮ বিভাগ থেকে ২৩৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮৩টি নমুনা নেয়া হয়েছে ঢাকা বিভাগ থেকে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ৫১, রাজশাহী থেকে ৩৪, খুলনা থেকে ২৬, বরিশাল থেকে ১৫, সিলেট থেকে ১০, রংপুর থেকে ১৪ ও ময়মনসিংহ থেকে ৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এর মধ্যে ১৪৮টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। ১১৮টি নমুনায় করোনাভাইরাসের ধরন ওমিক্রন পাওয়া গেছে, যা ৮০ শতাংশ। বাকি ৩০টি নমুনায় অর্থাৎ ২০ শতাংশ নমুনায় মিলেছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।’
ওমিক্রনের মধ্যে দুটি সাব ভ্যারিয়েন্ট বা উপধারা পাওয়া গেছে। সিকোয়েন্স করা মোট নমুনার মধ্যে ৩৯ শতাংশ উপধারা বিএ.১ এবং ৪১ শতাংশ বিএ.২ উপধারা পাওয়ার কথা জানিয়েছে আইইডিসিআর।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, ‘ওমিক্রনের বিএ.২ সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএ.১ থেকে বেশি সংক্রমণ করে। বিএ.১ যখন প্রাধান্য বিস্তার করছিল তখন সংক্রমণ চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে কমে যায়। কিন্তু বিএ২. ভ্যারিয়েন্ট প্রমিনেন্ট থাকলে ৭ থেকে আট সপ্তাহ লাগে কমতে। এ কারণে সংক্রমণটা ধীরে ধীরে কমবে।’
বিএসএমএমইউ’র গবেষণায় পাওয়া ফলে বলা হয়, গত এক মাসে হাসপাতালটিতে ভর্তি হওয়া কভিড রোগীর ৮৮ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ‘জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্ট’র ফল পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত ৯ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কভিড-১৯ আক্রান্ত ৯৩৭ জনের নমুনার জিন বিন্যাস বা জিনোম সিকোয়েন্স করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে ভর্তি ও বহির্বিভাগের রোগী মিলিয়ে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, ‘ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ৮২ শতাংশ ও ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট ১৮ শতাংশ পেয়েছি। এ সময় ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট (উপধারা) বিএ.১, বিএ.১.১, বিএ.২ পরিলক্ষিত হয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিএ.২ বেশি সংক্রামক।’