নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জানুয়ারি থেকে দেশে বৈদশিক মুদ্রার কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, ডলার সংকট নিরসনের জন্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এতে করে চলতি হিসেবে ঘাটতি কমে আসছে এবং রিজার্ভ থেকে ডলার খরচও কমে আসছে। এরই মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আগামী জানুয়ারি থেকে ডলারের সংকট কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল এক সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্পের (এসএসজিপি) উদ্যোগে আয়োজিত এলডিসি থেকে উত্তরণ-বিষয়ক এই জাতীয় সেমিনারের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, ইআরডি সচিব শরিফা খান ও এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
গভর্নর তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে এক ধরনের টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ পরিস্ততি সৃষ্টির পেছনে বেশ কয়েকটি বিষয় ভূমিকা রেখেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এছাড়া আমরা চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে পণ্য আমদানি হয়েছে। বিষয়টি অস্বভাবিক মনে হওয়ায় আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখি। তাতে দেখা যায়, অনেক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যে মূল্য ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক দামের তুলনায় অনেক বেশি।
তিনি উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং হয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করি এবং এলসি খোলার ক্ষেত্রে নানা ধরনের শর্ত আরোপ করি। এতে করে প্রয়োজনীয় এলসি খোলার হার হ্রাস পেয়েছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারে এলসি খোলা হচ্ছিল, বর্তমানে তা পাঁচ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে এখন রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে, তার পরিমাণ আমদানি ব্যয়ের তুলনায় বেশি। এতে করে চলতি হিসাবে ঘাটতি দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, আগামী জানুয়ারি থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার কোনো ঘাটতি থাকবে না।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে পণ্য আমদানি করতে দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলসি (ঋণপত্র) খুলছে না। ডলার সংকটে আমদানি এলসি খোলা যাচ্ছে নাÑএমন অভিযোগ মোটেই সত্য নয় মন্তব্য করে গভর্নর বলেন, পণ্য আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না। সঠিক দরে এলসি খুলতে বাধা নেই। ব্যাংক এলসি খুলতে পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো সমস্যা নেই।
ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে বেধে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়িয়েছে। আমরা যদি সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিই তাহলে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। প্রতি বছর যে ২০ লাখ নতুন বেকার চাকরি বাজারে প্রবেশ করছে তাদের কর্মসংস্থান হবে না।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে ডলার সংকটে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমছেই। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। অথচ গত বছরের আগস্টে যেখানে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।
রিজার্ভ কমে আসায় তৈরি হওয়া সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিচ্ছে সরকার। এছাড়া বিশ্বব্যাংক এবং জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা থেকেও ঋণ নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।