শেয়ার বিজ ডেস্ক: স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। মেয়াদ পূরণ করতে অপারগ হওয়ায় তিনি জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। পদত্যাগের ঘোষণায় আবে বলেন, তিনি চান না তার অসুস্থতা জাপান সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথে কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করুক।
৬৫ বছরের আবে গত কয়েক বছর ধরে ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ রোগে ভুগছেন। গত জুলাইয়ে তার রক্তবমি হয়। তারপর থেকে তিনি নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহে তাকে দুইবার হাসপাতালে যেতে হয়। সম্প্রতি তার শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে।
আবে গত বছরই জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার রেকর্ড গড়েন। আর চারদিন আগে গড়েন টানা সবচেয়ে বেশিদিন প্রধানমন্ত্রী থাকার রেকর্ড। ২০১২ সাল থেকে তিনি টানা এ দায়িত্ব পালন করছেন।
পদত্যাগের ঘোষণায় যা বললেন আবে:
‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ রোগের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন আবে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে। যে কারণে এখন থেকে তাকে চিকিৎসকে তত্ত্বাধানে থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হবে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাতে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবেন না বলে মনে করেন আবে।
তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক ভেবে দেখলাম, আমার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাওয়া যাওয়া উচিত হবে না। করোনাভাইরাস মহামারী চলছে এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের নেওয়া কৌশলও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি; এমন সময়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই পদত্যাগের জন্য আমি জাপানের জনগণের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী।”
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আবের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এ রোগের কারণে ২০০৭ সালেও তিনি একবার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে ৫২ বছর বয়সে প্রথমবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন আবে। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সবচেয়ে তরুণ প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্ম নেওয়া জাপানের প্রথম প্রধানমন্ত্রীও বটে।
দায়িত্ব ছাড়ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে
গত কয়েক বছর ধরে আবে ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ রোগে ভুগছেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহে তাকে একবারও জনসম্মুখে দেখা যায়নি বলে জানায় বিবিসি। এ সময় তিনি পরপর দুইবার হাসপাতালে যান বলে খবর বের হয়। যা নিয়ে জনমনে কৌতুহল ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে করোনাভাইরাস মহামারীর এ সময়ে। জাপানে সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে।
জনগণের সে উদ্বেগ মেটাতে মন্ত্রী পরিষদের মুখ্য সচিব ইয়াশিহিদে সুগা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন সুস্থ আছেন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তত রয়েছে, চিকিৎসায় তেমন কোনও উন্নতি হয়নি।
রাজনীতিতে আবের পথচলা:
আবে ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো এলডিপি’র টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কোবে স্টিল কোম্পানির এক সময়ের কর্মকর্তা আবে ২০০৬ সালে দলীয় সভাপতির দায়িত্ব পান এবং প্রথমবার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু এক বছর পর স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেন।
২০১২ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আবের দল জয়ী হয়ার পর আবারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। দুই বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ‘আবেনোমিক্স’ বা ‘আবেতত্ত্ব’ দেশটির অর্থনীতিকে আরও বেশি চাঙ্গা করবে বলে ফের দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ক্ষমতায় আসেন।
তারপর উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত আগ্রাসী ভাব, দেশের অর্থনৈতিতে ধস, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট নিয়ে জনগণের অসন্তোষে আবের জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী হয়ে পড়লে ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ক্ষমতায় ফেরেন।
এখন কী হবে?:
আবে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও এখনই তা কার্যকর হচ্ছে কিনা বা উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাবেন কিনা সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি বলে বিবিসি জানিয়েছে।
জাপানের আইনানুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে অপারগ হয়ে পদত্যাগ করলে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী আস্থায়ীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
সেক্ষেত্রে উপ প্রধানমন্ত্রী তারো আসো দৌড়ে সবার আগে আছেন বলে জানায় বিবিসি। তিনি একই সঙ্গে জাপানের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। তারপর আছেন চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইওশিহিদা সুগা।
দলের নতুন সভাপতি এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে না নেওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করে যাবেন। সব কাজ চালিয়ে নিতে পারলেও তিনি নতুন নির্বাচনের ডাক দিতে পারবেন না। পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হবে। বিজয়ী ব্যক্তি আবের মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তারপর নতুন নির্বাচন হবে।