শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড মহামারির কারণে সৃষ্ট সরবরাহ শৃঙ্খলের সংকট কাটিয়ে উঠেছে জাপান। ফলে চলতি বছরের বিদায়ী নভেম্বর মাসে দেশটির শিল্পকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বরে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম গত চার বছরের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর: রয়টার্স, আল জাজিরা।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কভিডের সংকটকালীন সরবরাহ সমস্যা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনকারীদের উৎপাদন ও ক্রয়াদেশ বেড়েছে। তবে কাঁচামালের স্বল্পতা এবং সরবরাহ বিলম্ব হওয়ায় গত ১৩ বছরের মধ্যে পণ্যের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনও দেশটির কারখানাগুলোয় খরচের চাপ একটি সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে। কারণ উপকরণের ঘাটতি এবং দেরিতে সরবরাহের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েই চলছে।
নভেম্বরে দেশটির আউ জিবুন ব্যাংক জাপানের চূড়ান্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়, নভেম্বরে ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) মৌসুমভিত্তিক সামঞ্জস্যের ভিত্তিতে ৫৪ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে গত চার বছরে দ্রুত প্রবৃদ্ধি। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের মাসে এ পিএমআই সূচক ছিল ৫৩ দশমিক দুই পয়েন্ট, যা ২০১৮ সালের পর থেকেই এ প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল। গত ১০ মাস ধারাবাহিকভাবে দেশটির কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বেড়েছে।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মার্কিটের অর্থনীতিবিদ উসামাহ ভাট্টি বলেন, জাপানের উৎপাদন খাত চতুর্থ ত্রৈমাসিকের মাঝামাঝি সময়ে অপারেটিং অবস্থার উন্নতি দেখতে পেয়েছে। নির্মাতারা লিড টাইমে একটি টেকসই ও চিহ্নিত অবনতির কথা উল্লেখ করেছেন। সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হলে উৎপাদন কার্যক্রমে প্রভাব পড়ে বলেও জানান তিনি।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, গড় উৎপাদন খরচ বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে উপাদানের ঘাটতি ও লজিস্টিক ব্যাঘাত। এ বিষয়গুলোই খরচের বোঝা বাড়ায়। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকেই দ্রুত গতিতে উৎপাদন মূল্য বাড়ছে।
প্রকাশিত দেশটির সরকারি তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, জাপানের শিল্প খাতের উৎপাদন প্রথমবার বেড়েছে অক্টোবরে। কারণ রাসায়নিক, ইস্পাত ও অন্যান্য খাতে দ্রুত গাড়ি উৎপাদন অফসেট হ্রাস পেয়েছে। কভিড মহামারি কাটিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান খুব দ্রুতই পুনরুজ্জীবিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ায় ডিসেম্বরে শিল্প প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ওমিক্রন আতঙ্কে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এরই মধ্যে জাপান বিদেশিদের জন্য সীমন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে উৎপাদন এবং ক্রয়াদেশ উভয় হ্রাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কমছে কর্মক্ষম কর্মী: এদিকে শুক্রবার জাপান সরকার জাতীয় আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর দেশটিতে কর্মক্ষম কর্মীর সংখ্যা কমে ৭৫ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালের পর থেকে কর্মক্ষম কর্মী (১৫-৬৪ বছরের) ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে বলা হয়, গত ২৫ বছরে এ কর্মী কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। ফলে উৎপাদন খাতে বিদেশি কর্মীর ওপর নির্ভরতা বাড়ছে।
যদিও সম্প্রতি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজু আবে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তার দেশে বছরে এক দশমিক এক হারে দেশীয় কর্মক্ষম কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের ১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে মোট জনসংখ্যা ১২৬.১৪ মিলিয়ন। তবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২০ সালে জনসংখ্যা শূন্য দশমিক সাত শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।