নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির কেউ নন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেছেন, আমি বা জিএম কাদের (জাপা চেয়ারম্যান) যেটা বলি; সেটা হলো জাতীয় পার্টির কথা। উনি (রওশন এরশাদ) দলের কেউ নন। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক; আলংকারিক পদ। নির্বাহী কোনো ক্ষমতা নেই তার।
গতকাল বুধবার দুপুরে বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
চুন্নু বলেন, রওশন এরশাদ বিরোধী দলের নেতা, সেই হিসেবে সংসদ নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করেছেন। এর সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। দলের মধ্যে অনৈক্যও নেই। দলের কোনো নেতৃত্ব বাইরে যায়নি! উনি (রওশন) আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, দলীয় কোনো পদ হোল্ড করেন না।
ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি বা জোট করার বিষয়ে চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মূলত নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের কৌশল হিসেবে, রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে সংসদীয় আসনসহ যেকোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। না-ও হতে পারে। সিদ্ধান্ত হতে পারে, না-ও হতে পারে। নির্বাচনী কৌশল হিসেবে রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই।
নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, আমরা নির্বাচনে এসেছি নির্বাচন করার জন্য, না করার জন্য নয়। নাটক করার জন্য আসি নেই। নির্বাচন করব এবং নির্বাচন করে আগামীতে ক্ষমতায় যাব সেই স্বপ্নেও আমরা বিভোর। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যাবে সে রকম চিন্তাই আমাদের মধ্যে আছে। কাজেই নির্বাচন থেকে চলে যাব কেন!
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন করার শর্ত হিসেবে আমাদের একটাই দাবি, নির্বাচনের পরিবেশ এমন হতে হবে যেন ভোটারদের আস্থা আসে। আর কোনো দাবি আমাদের নেই।’
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জাতীয় পার্টির বিশ্বাস বেড়েছে বলেও জানান দলটির মহাসচিব।
গত মঙ্গলবার রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, ‘আমি নির্বাচনে যেতে চেয়েছিলাম, জিএম কাদের আমাকে যেতে দেয়নি। জাপার সঙ্গে জোট না করতে আওয়ামী লীগকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।’
এ বিষয় চুন্নু বলেন, ‘উনাকে, উনার ছেলেকে ও আরেকজনকে আপনাদের মাধ্যমে বারবার বলেছি। উনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। উনি নিজেই বলেছেন নির্বাচন করবেন এবং ফরম নেবেন। আমি বলেছি, আপনি নির্দেশ দিলে ফরম আমি আপনার বাসায় দিয়ে আসব। উনি বলেছেন লোক পাঠাবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন রাত ১০টা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। তারপর তিনি সংবাদ সম্মেলনে বললেন যে, নির্বাচনে যাবেন না। এখন দোষ কার; আপনারা চিন্তা করবেন।’
আগামী ৭ জানুয়ারি হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোট। বিএনপি ভোট বর্জন করায় এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে জাপা। ২৮৭টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মুখোমুখি হচ্ছে আরও ২৯টি দল।
সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের কাছে ২৬টি আসন পেয়েছিল জাপা; জিতেছিল ২৩টি আসনে। আর তার আগের দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ৩৪ আসনের সমঝোতা হয় জাপার। সেই ভোটে ৩৪ আসনে জাপার প্রার্থীর বিপক্ষে কোনো প্রতিযোগী রাখেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটসঙ্গী হয়ে জাতীয় পার্টি পায় ৭.০৪ শতাংশ ভোট। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে জাতীয় পার্টির পক্ষে ৭ শতাংশ ভোটার রায় দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকার সঙ্গে জোট করে লাঙ্গলে ৫.৩৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পায় জাপা।