জাপা নিজের শক্তিতে নির্বাচন করলে স্বাগত জানাই: কাদের

GM Kader JP Chairman in absence of Ershad

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে সমঝোতা হলেও, সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার নিজের শক্তিতে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানাবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।

কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির আসনগুলোয় ছাড় দেয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো তালিকা পাইনি। তারা যদি নিজেদের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন করেন, এ মুহূর্তে এটাই হবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো খবর।

২০০৮ সাল থেকে সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে নবম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মহাজোট করেই অংশ নেয়।

২০১৪ সালে বিএনপির বর্জনে দশম সংসদ নির্বাচনে জোট না হলেও আসন সমঝোতা হয় দুই দলে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল এমন ৩৪টি আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ, এসব আসনেই জিতে আসেন লাঙ্গলের প্রার্থীরা।

এই সমঝোতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল রওশন এরশাদের, যিনি ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণের বিষয়ে জোরালো ভূমিকা নেন।

বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস আন্দোলনের মুখে জাতীয় পার্টির দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একেবারে শেষ মুহূর্তে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু রওশন বলেন, তিনি ভোটে যাবেন, তার অনুসারীরাও উঠবেন না। ভোট শেষে রওশন এরশাদকে সংসদীয় দলের নেতা বানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা, তিনি হন বিরোধীদলীয় নেতা। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরও একই পদে থাকেন রওশন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে পেরে না উঠে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা এবার ভোটে আসছেন না। তবে ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্বের লড়াইয়ে এরশাদের ভাই জিএম কাদেরের কাছে দৃশ্যত পরাভূত রওশন। এবার দলের মনোনয়নে তার অনুসারীদের প্রায় সবাই বাদ পড়েছেন।

এবার তার অনুসারী মশিউর রহমান রাঙ্গার রংপুর-১, ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদের রংপুর-৩, জিয়াউল হক মৃধার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, রুস্তম আলী ফরাজীর পিরোজপুর-৩ আসনে তাদের দলের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এগুলোসহ আরও কিছু আসন না পেয়ে নিজেও ময়মনসিংহ-৪ আসনে দাঁড়াচ্ছেন না রওশন।

ভোটে আসার শর্ত হিসেবে জাতীয় পার্টিকে নিজের মতো চালানোর শর্ত দিয়েছেন জিএম কাদের বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর। যদিও এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য আসেনি। রওশন ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগের জাতীয় পার্টি ভাবনায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বলে নেতারা বলছেন।

তিনটি নির্বাচনে ছাড় দিলেও, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর আসনে এবার আওয়ামী লীগ নেতা নাসিরুল ইসলাম খানকে মাঠে থাকতে বলা হয়েছে। দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে অবলীলায় জিতে আসা ফখরুল ইমামের ময়মনসিংহ-৮ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেয়া হয়েছে। এভাবে ২৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২২ জনকে চাপে রেখেছে আওয়ামী লীগ। শুধু নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে সেলিম ওসমানকে ছাড় দেয়া হয়েছে।

জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার চিন্তা করছে না। বিএনপির বর্জনের কারণে আওয়ামী লীগবিরোধী ভোট তাদের বাক্সে পড়বে বলেই বিশ্বাস সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতাদের।

দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টি নিয়ে ভাবনা ও ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সত্যিকারের অপজিশন হিসেবে নিজেদের দাঁড় করানোর এটা মোক্ষম সুযোগ। তারা নিজেরাই নির্বাচন করতে পারলে আমরা স্বাগত জানাই।

আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। কাদের বলেন, ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের জোট, তাদের সঙ্গে আমাদের সিদ্ধান্ত হবে। সেই জোটকে বাইরে রেখে নির্বাচন করব সেই কথা আমরা ভাবিনি। যারা জিতে আসতে পারবেন, আগেও নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন, এরকম গ্রহণযোগ্য নেতা অবশ্যই বাদ পড়বেন না।

তবে আগের তিন নির্বাচনে শরিকদের যেসব আসনে ছাড় দেয়া হয়েছিল, সেখানে পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়ে তিনি বলেন, এখানে অ্যাটজাস্টমেন্টের ব্যাপার রয়েছে। এসব বিষয় ভেবে দেখা দরকার। মানুষ চায় না, এমন কোনো নাম জোট থেকে আমরা সমর্থন করতে পারব না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০