জাবিতে চলছে দফায় দফায় আন্দোলন

প্রতিনিধি,জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শনিবার রাতে এক বহিরাগত স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে জাবি ক্যাম্পাস। ঐ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর সহ তাকে সহয়তাকারী আরও তিনজন গ্রেফতার হলেও এর পেছনে মূলত প্রশাসনের গাফিলতিকে দেখছে সংশ্লিষ্ট আন্দোলনকারীরা। এজন্য বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, সিনেটরসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ঘটনার সাথে জড়িত সকলকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ কয়েকটি দফা দাবিতে মানববন্ধন, মশাল মিছিল, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং রেজিস্ট্রার ভবন অবরোধও করছেন সংশ্লিষ্ট আন্দোলনকারীরা। তাছাড়া নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ্ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারীদের মধ্যে রয়েছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সিনেট সদস্যবৃন্দ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক জোট সহ সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ।

বুধবার নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারা। এর মধ্যে সকাল পৌনে ১১ টায় সম্প্রতি সংঘটিত জঘন্যতম ঘটনার সাথে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সিনেট সদস্যবৃন্দ। এসময় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাবেক উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবির সহ অন্যান্য রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট সিনেট সদস্যবৃন্দ। এরপর বেলা ১২ টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার প্রেক্ষিতে নেয়া সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত সমূহের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং বহিরাগত ও অছাত্র মুক্ত নিরাপদ বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিতকরণে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এতে শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দরা।

দুপুর দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবন থেকে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ। দাবিগুলো ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করা সহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধ তদন্তপূর্বক তাদেরকে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।

এরপর বেলা সাড়ে তিনটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার ও নিপীড়নমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে মিছিল শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।এসময় শিক্ষার্থীদের ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ধর্ষকের ঠাঁই নাই, ধর্ষক মুক্ত ক্যাম্পাস চাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস দাও, ধর্ষকদের কোন দল নেই-একথা বলবেন না’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়। সবশেষে বিকেল পাঁচটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক জোটের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তাদের দাবিও পূর্বের আন্দোলনকারীদের মতোই জড়িতেদর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, আমরা আজ এখানে ধর্ষন ও গণরুমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করতে এসেছি। আমরা চাই যারা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ফাঁসি দেওয়া হোক। হলে ২৫০০ নয়, খুঁজে দেখেন পাঁচ হাজার ছাত্র হলে অবস্থান করছে। অছাত্ররা হলে অবস্থান করে আর বৈধ শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবন যাপন করে। অবিলম্বে হল থেকে গণরুম উচ্ছেদ করতে হবে। হলের প্রাধ্যক্ষ, ওয়ার্ডেনদের হলে থাকতে হবে। হলে ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে যেনো ছেলে মেয়েরা ফিরে আসে সে ব্যবস্থা করতে হবে। হলের পাশের দোকান উচ্ছেদ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কেনো দোকানের টাকায় চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অটো রিকশা বন্ধ করা হোক।

উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি আমাদের (সিনেটর) ভোটে নির্বাচিত উপাচার্য। আপনি কেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ভয় পান। আমরা আপনার সাথে আছি।আপনি মনে রাখবেন পাঁচ দিন মানে পাঁচ। এরপরে যেম একজন অছাত্র, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, বহিরাগত যেন আবাসিক হলে স্থান না পায়। ২১ টা হলের প্রভোস্ট একসঙ্গে যদি তাদের হলে অভিযান পরিচালনা করেন তাহলে কোন অবৈধ শিক্ষার্থীর সাহস নেই তাদের সামনে দাঁড়ানোর।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০