প্রতিনিধি,জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে গ্রাফিতির বিচারে তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তসমূহ নিয়ে চলছে সিন্ডিকেট সভা।
মঙ্গলবার বিকাল পাঁচ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের কাউন্সিল কক্ষে চলছে এ সিন্ডিকেট সভা। এতে সভাপতিত্ব করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম।
মাহমুদুর রহমান জনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৬ ব্যাচের ছাত্র। তিনি ২০১২ সালে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হন। এরপর ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে তিনি সহকারী অধ্যাপক। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ ওঠে।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জনি ও একই বিভাগে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষক আনিকা বুশরা বৈচির একটি অন্তরঙ্গ ছবি (সেলফি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করা হয়। যেখানে বলা হয়, এভাবেই ললিপপের ভেল্কিতে শিক্ষিকা হলেন আনিকা বুশরা বৈচি।
একই সঙ্গে বিভাগের শিক্ষক পদে আবেদনকারী ৪৩ ব্যাচের এক ছাত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ কথাবার্তার অডিও প্রকাশ্যে আসে। যেখানে মাহমুদুর রহমান জনি ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক গর্ভপাত করান। এছাড়া, জনির সঙ্গে ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রীর ‘অনৈতিক’ সম্পর্ক স্থাপন এবং ‘অশালীন’ চ্যাটিংয়ের ছবি ও তথ্য সামনে আসে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জনির বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর একাধিক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে জনির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তখন ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এ সময় জনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু এরপরও জনির বিচার নিয়ে শুরু হয় কালক্ষেপণ।
এদিকে নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মহুয়া মঞ্চে চলছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি। এছাড়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, অছাত্রদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিতসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ৷ প্রশাসনিক ভবন অবরোধ ও অবস্থান সহ বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তাছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছিলেন ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন ঐ ছাত্রলীগ নেতা।
জানা যায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত নারী ধর্ষণের ঘটনার পর নতুন কলার ভবনের একটি দেয়ালে ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি মুছে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতাকর্মীরা। এ অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন ৪৭ ব্যাচের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী। তাদের বিচারের বিষয়েও তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত শোনানো হবে এ সিন্ডিকেট সভায়।