প্রতিনিধি, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত শেখ রাসেল হলের পাশেই তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়। এতে আবাসিক শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। হল প্রশাসনের এমন অপরিকল্পিত ময়লা ব্যবস্থাপনার কারণে দুর্গন্ধে নাক-মুখ চেপে যাতায়াত করতে হয় শিক্ষার্থীদের।
গত ২৯ জানুয়ারি নবনির্মিত শেখ রাসেল হল উদ্বোধনের পর থেকেই হলের পাশের ডোবায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পচনশীল ময়লার অপসারণ ব্যবস্থা থাকলেও, অপচনশীল বা শুকনো ময়লা ব্যবস্থাপনায় নেই কোনো পরিকল্পনা। ময়লার স্তূপ সংলগ্ন উপরতলার রুমগুলোয় দুর্গন্ধে টিকে থাকা দায়।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি ব্লকের ময়লা সংগ্রহ করে ট্রলিতে সেই ময়লা ফেলা হচ্ছে হলের পাশেই ডোবার ধারে। হলে ক্যান্টিন না থাকায় শিক্ষার্থীদের পার্শ্ববর্তী রফিক জব্বার হল সংলগ্ন দোকানগুলোয় খেতে হয়। ফলে নাক-মুখ চেপে ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে হয় শিক্ষার্থীদের। তাছাড়া শুকনো ময়লাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। এভাবে দীর্ঘদিন ময়লা ফেলার কারণে পরিবেশ দূষণসহ বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন শিক্ষার্থীরা। তবে বুধবার সকালে জাবি উপাচার্য শেখ রাসেলের জš§ দিবসে বৃক্ষরোপণ উপলক্ষে হল পরিদর্শনে আসলে তড়িঘড়ি করে কিছু ময়লা সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু উপাচার্য চলে যাওয়ার পর আবারও একই জায়গায় ময়লা ফেলেন হলের কর্মীরা।
শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুজন মাহমুদ বলেন, ‘ময়লার এমন অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের রুমে দুর্গন্ধ আসে। ফলে রুমে থাকাই যায় না। তাছাড়া শ্বাসকষ্টের সমস্যাতেও ভুগছি বাতাসে ময়লার দুর্গন্ধ আসায়। নিয়মিত পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। হলে ক্যান্টিন না থাকায় বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু দুর্গন্ধ রুমে বসে খাবার খাওয়ার পরিবেশ থাকে না। তাই হল প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, হল থেকে দূরে কোনো স্থানে ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনা করা।’
হলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘হলের ক্যান্টিন চলাকালে পচনশীল ময়লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অপসারণ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে হলে ক্যান্টিন না থাকায় শুকনো ময়লা হলের পাশেই ফেলতে হচ্ছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুকনো ময়লা অপসারণের কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া আমাদের হলে লোকবল সংকটের জন্য মাত্র তিনজন ঝাড়–দার এতে ময়লা সংগ্রহ করতে হিমশিম খায়। ফলে তারাও বেশি দূরে ময়লা ফেলতে পারে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে।’
শেখ রাসেল হলের প্রাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তাজউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘ময়লা ফেলার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে যখনই আমি জানতে পেরেছি, এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা ময়লাগুলো হলের পাশের লেকে ব্যবস্থাপনা করব। একইসঙ্গে এ বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে উপাচার্য স্যারের সঙ্গে আলোচনা করব। শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হয় এমন কোনো কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে কর্মীরা ডোবার মধ্যে ময়লা ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে, তবে এখানে আর ময়লা ফেলা হবে না এটা নিশ্চিত।’
উল্লেখ্য, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি আবাসিক হল নির্মাণ কাজ শুরু। গত ২৯ জানুয়ারি মেয়েদের ফজিলাতুন্নেছা হল ও ছেলেদের শেখ রাসেল হল খুলে দেওয়া হলেও, হলগুলোয় নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। ফলে নানা ভোগান্তিতে রয়েছে আবাসিক এ দুই হলের শিক্ষার্থীরা।