নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের এ মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত অথবা তাকে পদচ্যুত করা উচিত। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গতকাল সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আমার কাছে একটি নতুন খবর আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘুষ চাওয়ার অপরাধে ছাত্রলীগের যে দুই শীর্ষ নেতাকে পদচ্যুত করা হয়েছে, এটাকে আবার নতুন নাম দিয়েছে তারা। কী দিয়েছে বলুন তো? ফেয়ার শেয়ার। ৫%, ১০% ঘুষ যে নেবে, এটা হলো ফেয়ার শেয়ার। এ ফেয়ার শেয়ারের মধ্যে আবার এখন ভাইস-চ্যান্সেলরের নাম চলে এসেছে। উনি নাকি ইতোমধ্যে এক কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন। দ্রুত তার পদত্যাগ করা উচিত। না হয় তাকে অব্যাহতি দেওয়া দরকার।
সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বের করে দিয়ে তারা স্বীকার করেছেন যে দুর্নীতি চলছে। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, হাজার চেষ্টা করে থলের বিড়াল ঢেকে রাখা যাচ্ছে না। কালো বিড়ালের মতো বের হয়ে আসছে এবং এগুলো এখন জনগণের কাছে পুরোপুরি চলে গেছে।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছাত্র ভর্তি করছে রাতের বেলায়। কোথায় আছে দুর্নীতিমুক্ত জায়গা? প্রতিটি জায়গায় পরীক্ষা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, বিচারালয় কোথাও যাওয়া যায় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কালকে আমাদের পুলিশ কমিশনার ভালো ভালো কথা বলেছেন। তার একটা কথা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। যদি কেউ কোনো কাজ না করে এবং সেবার বিনিময়ে যদি কোনো অর্থ দাবি করে, তাহলে আমাদের জানাবেন, আমরাই গিয়ে সেখানে বসব।
ফখরুল বলেন, যারা মিথ্যা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে, জোর করে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে থাকে, তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। এটা অবৈধ সরকার, এ পার্লামেন্ট অবৈধ। সুতরাং অবিলম্বে পার্লামেন্ট বাতিল করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে একটি নতুন নির্বাচন করতে হবে এবং সে নির্বাচনে নতুন সরকার নতুন পার্লামেন্ট গঠন হবে। আজকে এ হচ্ছে জনগণের দাবি।
তিনি বলেন, অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। কারণ, জনগণের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক, তিনি আইনসম্মতভাবে যেটি পান, সেই জামিন নিশ্চিত করতে হবে। কেন তাকে আটকে রেখেছেন? এত ভয় পান কেন? ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে একটি নাটক করলেন কেন? তাহলে গণতন্ত্রকে আপনারা চলতে দিতে চান না। যারা গণতান্ত্রিকভাবে কাজ করতে চায়, তাদের আপনারা কাজ করতে দিতে চান না।
আসামের নাগরিক পঞ্জি ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন- আমরা ভারত সরকারকে বিশ্বাস করতে চাই। আমরা উদ্বিগ্ন। ধিক্কার জানাই এ নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে, ধিক্কার জানাই এ মানসিকতাকে। আমার দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব যদি একবিন্দু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বাংলার মানুষ কোনোদিন তা মেনে নেবে না। মুক্তিযুদ্ধ করেছি ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দরকার হলে আমরা আরও বড় যুদ্ধে অবতীর্ণ হব।’
ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা ঢুকেছে। একজনকেও তাদের দেশে ফেরাতে পারেননি। ভারত-চীন নাকি আমাদের বড় বন্ধু। তাহলে বিষয়টা কী হলো। এদিকে আসামে এনআরসি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে ১৯ লাখ লোক বাদ দেওয়া হয়েছে। আসামের মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা বলেছেন, এদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে এ সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, যার হাতে গণতন্ত্র স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপদ, তাকে হত্যা করার জন্য এভাবে কারাগারে আটকে রেখেছে। যে মামলায় তাকে আটক করে রাখা হয়েছে, সাজা দেওয়া হয়েছে, এ রকম মামলাতেই আওয়ামী লীগের বহু নেতা জামিন নিয়ে বাইরে আছেন। অথচ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, খালেদা জিয়া যদি বের হয়ে আসেন, তাহলে জনগণকে সংগঠিত করে এই অপশাসন, অন্যায়-অত্যাচার, গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে নিজের প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। আর তা মোকাবিলা করার মতো ক্ষমতা তাদের নেই বলেই তাকে জেলখানায় বন্দি করে রাখা হয়েছে।’
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি মিজানুর রহমানের (বীর প্রতীক) সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা প্রমুখ।
জাবি ভিসির অপসারণ চাইলেন মির্জা ফখরুল
