শেয়ার বিজ ডেস্ক: জামিন পেতে অন্তত দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্ত সংশোধনের জন্য ডেসটিনির দুই কর্ণধারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
এ আদেশের ফলে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন ও ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের দেওয়া আগের শর্তই বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এর আগে আপিল বিভাগ থেকে বলা হয়েছিল, ডেসটিনি ট্রি প্ল?ান্টেশন প্রকল্পের ৩৫ লাখ গাছ বিক্রি করে দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা জমা দেওয়ার পর তার প্রমাণপত্র হলফনামা আকারে দাখিল করে অথবা নগদ দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে দিলে তবেই দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাতের এ মামলায় জামিন মিলবে তাদের।
এ প্রসঙ্গে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট ওই দুজনকে জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন। পরে আপিল বিভাগ শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন। আপিলের দেওয়া ওই শর্ত সংশোধন চেয়ে আবেদন করেন দুজন। সেটি আজ খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
এর আগে গত বছর ১৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ ওই দুই শর্তে ডেসটিনির দুই শীর্ষ ব্যক্তির জামিন মঞ্জুর করার পাশাপাশি ওই অর্থ ডেসটিনির ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করতে দুদক চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময়ে আদালতের দেওয়া কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেননি রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসাইন।
উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনি গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ১৯ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ৪৬ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল এক হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে এক হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে আট লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। উল্লেখ্য, ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি দিয়ে ২০০০ সালে ডেসটিনি গ্রুপের যাত্রা শুরু। এক দশকের মধ্যে বিমান পরিবহন, আবাসন, কোল্ডস্টোরেজ, জুট মিল, মিডিয়া, বনায়নসহ বিভিন্ন খাতে ৩৪টি কোম্পানি খুলে বসে এ ডেসটিনি। কিন্তু মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের নামে ২০ লাখের বেশি মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হলে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান কোম্পানির অধিকাংশ শীর্ষ কর্মকর্তা।