শেয়ার বিজ ডেস্ক: পূর্ব আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়ার ঋণ পুনর্গঠনে চীন সহায়তা করবে। এ তথ্য জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট হাকাইন্দে হিচিলেমা চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। খবর: আফ্রিকানিউজ।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে চীনসহ অন্যান্য ঋণদাতারা জাম্বিয়ার ঋণ পুনর্গঠনে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির রাজধানী লুসাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক পর্যালোচনা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন হিচিলেমা। সেখানে তিনি জানান, বর্তমানে ঋণের পরিমাণ এত বেশি যে, সরকারের পক্ষে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন কঠিন হয়ে পড়বে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, জাতির উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের জন্য অন্য ঋণদাতাদের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছি। আমি অর্থ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলিতভাবে নিজ উদ্যোগে চীনকে সম্পৃক্ত করেছি, কারণ প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই আমার কর্তব্য, যা আপনারা আমার ওপর অর্পণ করেছেন। এই সাধারণ ফ্রেমওয়ার্কে যুক্ত হওয়ায় আমি চীনকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।
তিনি মনে করেন, এই অগ্রগতির ফলে জাম্বিয়া ঋণ পুনর্গঠন কর্মসূচির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে যাতে দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও পুনরুজ্জীবিত হবে। গত বছর ঋণ পুনর্গঠনে আইএমএফের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ের চুক্তি হয়। পাহাড়সম ঋণ নিয়ে যে জাতীয় অর্থনীতি গঠন সম্ভব নয় তা তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা এই ঋণ পরিশোধের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সম্পদের ব্যবহার করে নতুন কর্মসংস্থান করব, এতে অর্থনীতির পরিধি বাড়বে। তবে এই সমঝোতা প্রক্রিয়া শুর হওয়ার সময় দেশের সুশীল সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি চীনকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং পরে ব্যক্তিগতভাবে চীনকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেন বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ তার একক প্রচেষ্টায় চীন সম্পৃক্ত হয়েছে।
জাম্বিয়ার সরকারপ্রধান জানান, আগামী আট মাসের মধ্যে তার ইউনাইটেড পার্টি ফর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউপিএনডি) ঋণ পুনর্গঠনে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে এবং স্থিতিশীল বিনিময় হারের জন্য সরকার ধারাবাহিকভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফলে সরকার দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে বলে আশাবাদী তিনি। অবশ্য তার সরকার অর্থনৈতিক সংকটের জন্য এর আগের প্যাট্রিওটিক ফ্রন্টের (পিএফ) শাসনামলকে দায়ী করেছেন। বিশেষ করে পিএফ থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট এডগার লুংগুর সমালোচনায় মুখর বর্তমান প্রেসিডেন্ট।
জাম্বিয়ার অসংখ্য মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করলেও বিশ্বের দ্রæতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশের মধ্যে অন্যতম এটি। দেশটির বার্ষিক জিডিপি গড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এইডস মহামারি, শিশু মৃত্যুর উচ্চহার, নি¤œ গড় আয়ু সত্তে¡ও আফ্রিকা মহাদেশের অন্য দেশগুলোর তুলনায় জাম্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বরাবরই স্থিতিশীল। দেশটি ১৯৬৪ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর কখনও বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়নি সেখানে। এ কারণে আফিক্রার অন্য দেশগুলোর তুলনায় স্বতন্ত্র অবস্থানে রয়েছে জাম্বিয়া। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে চীনের সঙ্গে অন্যতম পুরোনো ক‚টনৈতিক অংশীদার এটি। তবে ইউরোপের উপনিবেশের মতো চীন আচরণ করছে বলে অভিযোগ ওঠে এডগার লুংগুর আমলে। জাম্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অভিযোগ করেন এডগার। চীনা বিনিয়োগের ব্যাপারে সন্দিহান ছিল তার প্রশাসন। বিশেষ করে সে সময় চীনে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৬০ কোটি ডলার।
সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসে হিচিলেমার বর্তমান প্রশাসন। তিনি সব ঋণদাতার সঙ্গে ঋণ নিয়ে উম্মুক্ত আলোচনা শুরু করেন। ২০০০ সাল থেকে জাম্বিয়ায় ঋণ সরবরাহ করেছে চীনে ১৮টি প্রতিষ্ঠান। সেই থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারে, যার অর্ধেকের বেশি নেয়া হয় ২০১৫ সালে।