শেয়ার বিজ ডেস্ক: পরিবহন ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন কমাতে সব দেশকেই ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে। জার্মানিতে গাড়ির গতিবেগ কমানো স্পর্শকাতর বিষয়। কিন্তু জলপথের ব্যবহার আরও বাড়িয়ে সড়কের ওপর চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে পরীক্ষানিরীক্ষা করছে একটি কোম্পানি। খবর: ডয়চে ভেলে।
এ এক ভিন্ন ধরনের ডেলিভারি। বার্লিনের খালে যান চালানোর সময় শুধু ঢেউয়ের শব্দ শোনা যায়। প্রতিদিন ডিয়র্ক ব্রাউমান জার্মানির রাজধানীর উপকণ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫০ পার্সেল শহরের কেন্দ্রে ভেস্টহাফেন বন্দরে নিয়ে আসেন। ডিএইচএল লজিস্টিক্স কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে সেই সৌরশক্তিচালিত নৌকাটি চালাচ্ছে। মালপত্র পরিবহন সড়ক থেকে পানিতে সরিয়ে আনাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য। ডিয়র্ক বলেন, ‘শুধু হিসেবের ভিত্তিতে পরিকল্পনার বদলে কোম্পানি যে হাতেনাতে পরীক্ষা চালাচ্ছে, সেটা সত্যি দারুণ ব্যাপার। লজিস্টিক্সের সমস্যা শনাক্ত করতে আমরা সত্যি পরীক্ষা চালাচ্ছি।’
যেমন একদিন সকালে লকে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল। তার ওপর ফর্কলিফট অপারেটর দেরি করে এসেছেন। মাল তোলা আর খালাস করার প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
এমন ধরনের প্রবণতা আন্দ্রেয়াস কিনকে মুগ্ধ করে। বার্লিনের এই অধ্যাপক মানুষ ও পণ্য বহনের সেরা উপায় নিয়ে গবেষণা করেন। বিশ্বজুড়ে শহরগুলোর সড়ক ভিড়ে জর্জরিত হওয়ায় বায়ু ও শব্দদূষণ কমানোর আইডিয়া তার খুবই মনে ধরে। আন্দ্রেয়াস মনে করেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা মানুষ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে জলপথের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছি না। আমরা শহরাঞ্চলে আরও অনেক কিছু করতে পারি। ডিএইচএল বর্তমানে যেটা করছে, সেটাই সঠিক পথ। নির্গমনহীন এই নৌকা প্রায় কোনো শব্দ করে না এবং বেশি ঢেউ সৃষ্টি করে না। ফলে শহর ও গ্রামাঞ্চলে সেটা কাজে লাগানো যায়। আমাদের জলপথের অভাব নেই।
শুধু বার্লিন শহরেই প্রায় ২০০ কিলোমিটার জলপথ রয়েছে, যা সড়ক পরিবহনের মাত্রা কমাতে পারে। এমন কৌশল অন্য অনেক শহরেও সফল হতে পারে। জার্মানিতে পরিবহন খাতই গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের জন্য দায়ী। ২০২২ সালে সেই পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি টন। জার্মানির সরকার মানুষের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বছরে ৯ কোটি টনে কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রার প্রয়োজনের কথা বলছে, সেটা এখনও দূর অস্ত।
সড়কের ওপর চাপ কমাতে জলপথে জোর জার্মানির: জার্মানির পরিবেশ এজেন্সি তাই হাইওয়েতে যানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং জনপদে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারে বেঁধে দেবার ডাক দিচ্ছে। শুধু যানের গতি কমিয়েই জার্মানি বছরে ৬০ লাখ টন গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে পারে। কিন্তু বিশ্বের অন্য জায়গায় যা স্বাভাবিক, জার্মানিতে সেই বিষয়টি তীব্র বিভাজন সৃষ্টি করছে। সেখানে গতিবেগে রাশ টানার ডাক বারবার কেন বিফল হয়, মোবিলিটি গবেষক হিসেবে আন্দ্রেয়াস কিন সে বিষয়ে নিজস্ব এক তত্ত্ব খাড়া করেছেন।
কিন্তু আন্দ্রেয়াস কিন এ ক্ষেত্রে আরও উদ্যোগ দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘অবশেষে ডিজেল থেকে ইলেকট্রিক বা ফুয়েল সেল এবং হাইড্রোজেন ড্রাইভ সিস্টেমে আসতে পারলে আমরা আরও উপকার পাব। ট্রাক কীভাবে চালানো হচ্ছে, শুধু সেই আচরণ বদলে বেশি কিছু হাসিল করা যাবে না।’
জার্মানির কিছু অঞ্চল রাজপথে বৈদ্যুতিকীকরণ করে ট্রাকের নির্গমন কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে। সেটা অনেকটা ইলেকট্রিক ট্রেন লাইনের মতো হবে। কিন্তু সেটা এখনও পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে।
আপাতত ডিএইচএল কোম্পানির দৈনিক পার্সেলের পরিমাণের মাত্র শূন্য দশমিক সাত শতাংশ জলপথে পরিবহন করা হয়। কিন্তু বিশাল এই লজিস্টিক্স কোম্পানি বার্লিনে আরও বড় নৌকা কাজে লাগিয়ে এবং আরও বেশি জায়গায় থামার পরিকল্পনা করছে। আরও পার্সেল নিয়ে ভেস্টহাফেনে যাওয়ার পথে ডিয়র্ক ব্রাউমানের কণ্ঠে আশার আলো শোনা গেল। তিনি বলেন, ‘আমার মতে, এ ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। একটি নৌকা দুটি ট্রাকের বিকল্প হতে পারে। সেটা অবশ্যই একটা সুবিধা।
ডকে মাল খালাসের কাজ কয়েক মিনিটেই হয়ে যায়। পার্সেলগুলো ইলেকট্রিক যানে ভরে চূড়ান্ত গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া হয়। ভবিষ্যতে পার্সেল ডেলিভারি কেমন হতে পারে, এখানে তার একটা আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে।