Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:27 pm

জার্মানিতে রেল ধর্মঘটে ১০০ কোটি ইউরো ক্ষতির শঙ্কা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে মোট ছয় দিন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জার্মানির ট্রেন চালকদের ইউনিয়ন। এক ঘোষণায় ইউনিয়ন জানিয়েছে, বুধবার থেকে আগামী সোমবার পর্যন্ত ছয় দিন যাত্রীবাহী কোনো ট্রেন চলবে না জার্মানিতে। খবর: ডয়চে ভেলে।

এর আগে গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছে মালবাহী ট্রেনের ধর্মঘট। আগামী সোমবার থেকে যাত্রী ও মালবাহীÑউভয় ট্রেনই চলবে বলে জানিয়েছেন চালকরা।

এই ধর্মঘটে জার্মানিতে অন্তত ১০০ কোটি ইউরোর সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ ধর্মঘটের জেরে কেবল যাত্রী পরিষেবাতেই ব্যাঘাত ঘটছে না, সামগ্রিকভাবে জার্মানির শিল্পাঞ্চলও ক্ষতিতে পড়ছে। দেশটির বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল রেলের মাধ্যমে পাঠানো হয়।

শুধু জার্মানি নয়, জার্মানির রেলের মাধ্যমে গোটা ইউরোপের শিল্পাঞ্চলে কাঁচামাল পৌঁছায়। ইউরোপের শিল্পক্ষেত্রের কাঁচামালের ৬০ শতাংশ যায় জার্মানির রেলের মাধ্যমে। ফলে ইউরোপের অন্যান্য দেশের কর্তৃপক্ষের কপালেও ভাঁজ পড়েছে। কীভাবে কাঁচামাল পরিবহন করা হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।

এই ধর্মঘটের ফলে দৈনিক ১০ কোটি ইউরো ক্ষতি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বস্তুত কারও কারও মতে, সংখ্যাটা এর চেয়ে বেশি। জার্মানির ইকোনমিক রিসার্চের প্রধান মিশেল গ্রোমলিং জানিয়েছেন, ছয় দিনের ধর্মঘটের ফলে সব মিলিয়ে ১০০ কোটি ইউরো ক্ষতি হবে বলে মনে হচ্ছে। সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে।

অর্থনীতির আরেক বিশেষজ্ঞ হর্গ ক্রেমারের ধারণা, ছয় দিন টানা রেল ধর্মঘটের জন্য বেশ কিছু কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ সময়মতো কাঁচামালের জোগান পাবে না তারা। কারখানা বন্ধ মানে উৎপাদন বন্ধ। এই ক্ষতি এখনই হিসাব করা সম্ভব নয়। দৈনিক ৩০ মিলিয়ন বা তিন কোটি ইউরো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন ক্রেমার।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, মালবাহী ট্রেন বন্ধ থাকার ফলে শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপে তার প্রভাব পড়বে। জার্মানির গাড়িশিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সব মিলিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির দিকে দেশ ও ইউরোপকে নিয়ে যাচ্ছে এই ধর্মঘট।

এর আগে জানুয়ারির গোড়ায় তিন দিনের রেল ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছে রেল ইউনিয়ন। দৈনিক আয় বৃদ্ধির দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। তিন দিন ধর্মঘটের পরেও দাবি আদায় হয়নি। তাই এবার দীর্ঘ আন্দোলনের পথে নেমেছেন রেলচালকরা। ওই ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে জার্মানির অর্থনীতিতে। এতে দেশটির বাণিজ্য, পণ্য পরিবহন, বন্দরগুলোর কর্মকাণ্ড এবং ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আগের ধর্মঘট ডেকেছিল জার্মানির রেল চালকদের ইউনিয়ন জিডিএল। এতে শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেল অপারেটর ডয়চে বানই নয়, বরং রেল কার্গো ব্যবহারকারী অন্য কোম্পানিগুলোও ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

জার্মানির পণ্য পরিবহনের দুই-তৃতীয়াংশ সম্পন্ন হয় সড়কপথে এবং এক-পঞ্চমাংশ হয় রেলপথে। তবে এর গুরুত্ব কম নয়। বিশেষ করে ইস্পাত, রাসায়নিক দ্রব্য, কয়লাসহ আরও অনেক ধরনের পণ্য পরিবহনের জন্য রেলপথের কোনো বিকল্প নেই।

রেলপথে পণ্য পরিবহনের অর্ধেক ডয়চে বানের দখলে। বাকিটুকু পরিচালনা করে বেসরকারি কেম্পানিগুলো। চলতি মাসের শুরুর দিকে হওয়া ধর্মঘটে বেসরকারি কোম্পানিগুলো সাড়া না দিলেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সামগ্রিক রেল খাতে। কেননা রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এবং সুইচ টাওয়ারের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা ধর্মঘটে যোগ দেন। এ কারণে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। এর আগের সব ধর্মঘটে দেখা যায়, রেল চালকদের ধর্মঘটের কারণে বন্দরের ব্যবস্থাপনার ওপরও প্রভাব পড়ে। কনটেইনার পরিবহন না হওয়ায় বিভিন্ন বন্দরে জট তৈরি হয়।  হামবুর্গ বন্দরের সব কনটেইনার রেলপথে পরিবহন করা হয়।

জার্মানির অর্থনীতি ভারী শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। ধর্মঘটের কারণে সবচেয়ে ক্ষতি হয় এই শিল্পের। সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শিল্পের উৎপাদন হ্রাস পায়।

জার্মান সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে পণ্য পরিবহনে রেলের অবদান ১৯ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে চায়।