নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাস বিল বাবদ জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডকে (জেজিটিডিএস) প্রদান করা অর্থের অতিরিক্ত অংশ ফেরত পাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক দুই বছর আগে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডকে গ্যাস বিল বাবদ ৯০ কোটি ২৫ লাখ টাকা প্রদান করে লাফার্জহোলসিম। তবে সালিশি আদালতের রায় লাফার্জহোলসিমের অনুকূলে আসায় জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিকে গ্যাস বিল বাবদ দেয়া অতিরিক্ত অর্থ তালিকাভুক্ত কোম্পানিটিকে ফেরত দিতে হবে। গত শুক্রবার লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ তাদের কৌঁসুলির মাধ্যমে রায়টি পেয়েছে। সালিশি প্রক্রিয়ায় লাফার্জহোলসিম দাবি করেছিল, তাদের ও জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির মধ্যে স্বাক্ষরিত গ্যাস বিক্রি চুক্তি (জিএসএ) অনুসারে গ্যাসের যে মূল্য নির্ধারিত রয়েছে সেটিই সর্বোচ্চ মূল্য, যা তালিকাভুক্ত কোম্পানিটিকে সরবরাহকৃত গ্যাসের মূল্য হিসেবে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি ধার্য করতে পারে। অন্যদিকে সালিশি আদালতে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি দাবি করে, জিএসএর ধারা অনুসারে গ্যাসের মূল্যের সর্বোচ্চ সীমা যা-ই থাকুক না কেন তাদের সরবরাহকৃত গ্যাসের মূল্য সরকার বা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) পক্ষ থেকে যেটি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটিই কার্যকর বলে গণ্য হবে। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে সালিশি আদালত লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের অনুকূলে রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়েছে, জিএসএ অনুসারে গ্যাসের দামের যে সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারিত রয়েছে, সেটিই বৈধ এবং জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির পক্ষ থেকে চুক্তিতে নির্ধারিত সর্বোচ্চ মূল্যের অতিরিক্ত দামে অতীতে যেসব বিল করা হয়েছে তা পরিশোধের জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এরই মধ্যে আপিল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সরবরাহকৃত গ্যাসের জন্য লাফার্জহোলসিমের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ বাড়তি অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে, তা তালিকাভুক্ত কোম্পানিটিকে ফেরত দিতে জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানিকে আদেশ দিয়েছেন সালিশি আদালত।
সিলেটের সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত কারখানায় গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারি জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানি ও লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের মধ্যে একটি জিএসএ স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুসারে, সরকারের ট্যারিফ অনুযায়ী নির্ধারিত দামে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করে আসছিল কোম্পানিটি। তবে ২০১৫ সালে বিইআরসি কর্তৃক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পর সমস্যার সূত্রপাত। বিইআরসির বর্ধিত ট্যারিফ অনুসারে জেজিটিডিএস গ্যাসের বিল জমা দিলে এ বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। কারণ বিইআরসির নতুন ট্যারিফ অনুসারে নির্ধারিত গ্যাসের দাম চুক্তিতে নির্ধারিত গ্যাসের দামের চেয়ে বেশি। এ বিষয়ে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে। এর মধ্যেই গ্যাসের বিল বাবদ দাবীকৃত অর্থ দুই মাসের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চূড়ান্ত নোটিস জারি করে জেজিটিডিএস। এরই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি নিষ্পত্তি ও আইনি প্রতিকারের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব আরবিট্রেশন ও উচ্চ আদালতে দ্বারস্থ হয় লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালের জন্য প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ১ টাকা ৫০ পয়সা চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর ফলে লাফার্জহোলসিম চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে ১৭৪ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার টাকা লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিতরণ করবে। অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশসহ কোম্পানিটি ২০২২ সালে মোট ৪৮ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করল, যা কোম্পনিটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে আয়কর পূর্ববর্তী পরিচালন মুনাফা ২৩ শতাংশ বেড়ে ৫৯৭ কোটি টাকা হয়েছে। নেট বিক্রি ১৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এছাড়া শেয়ারপ্রতি আয় ৩ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে বেড়ে ২০২২ সালে হয়েছে ৩ টাকা ৮৩ পয়সা।