নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের লিখিত (খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগ) পরীক্ষা গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২২টি জেলা শহরে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার এ পরীক্ষা দিচ্ছেন চার লাখের বেশি চাকরিপ্রার্থী। এদিকে পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় তিন জেলায় ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষা শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে আটটায় প্রার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়। তার আগে প্রার্থীরা অনলাইন থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা নিজ নিজ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসসহ সব ধরনের প্রতারণা এড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য অফিসার মাহবুবুর রহমান তুহিন। তিনি জানান, লিখিত পরীক্ষায় ২০-২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের মাধ্যমে টিকিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়ার প্রলোভনের অভিযোগে জয়পুরহাট জালিয়াতি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে বিভিন্ন জেলায় মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলায় পৌঁছে গেছেন।
কর্মকর্তারা জানান, চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোনো কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়িজাতীয় বস্তু, ইলেকট্রনিক হাতঘড়ি বা যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস, জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) ছাড়া কোনো প্রকার ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড অথবা অন্য কোনো কার্ড বা এ জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারেননি।
দ্বিতীয় পর্বে মোট পরীক্ষার্থী চার লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ জন। কেন্দ্রের সংখ্যা ৬০৩টি এবং কক্ষ নয় হাজার ৩৫৭টি। ২০২৩ সালের ২০ মার্চ দ্বিতীয় পর্বের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
এর আগে, প্রথম পর্বের (বরিশাল, সিলেট, রংপুর বিভাগ) পরীক্ষা ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। ২০ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ পর্বের মৌখিক পরীক্ষা চলমান।
এদিকে নওগাঁয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুইজনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সকালে পরীক্ষা চলাকালে আটক করা হয়।
বিকাল ৪টার দিকে জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা।
জেলা প্রশাসক জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে মান্দা উপজেলার মমিন শাহানা সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে মিঠুন, সুলতান ও রবিউল ইসলাম নামে তিনজন চাকরি প্রত্যাশীর কাছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া যায়। এ অপরাধে মিঠুনকে ১ মাস, সুলতানকে ১ মাস এবং রবিউল ইসলামকে ১০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই উপজেলার শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল কেন্দ্র থেকে আটক নাইমুর রহমান ও মোস্তাফিজুর বিন আমিনকে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এছাড়া মান্দা থানা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আরও ৫ জনকে আটক করা হয়। যেখানে জারজিস আলমকে ১০ দিন, ফজলে রাব্বি মণ্ডলকে ১ মাস, নুর আলমকে ৭ দিন, জামাল উদ্দিনকে ১০ দিন এবং আবদুল্লাহ সাইরাফিকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। নওগাঁ সদর উপজেলার বশির উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ (বিএমসি) কেন্দ্রে দুইজনকে ৫০০ টাকা করে মোট ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সদর উপজেলার চক এনায়েত উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাহাড়পুর জিএম হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে ১ জন করে মোট দুইজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলায় একজনকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বদলগাছী উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দের পর তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।
এদিকে জয়পুরহাটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল পরীক্ষা চলাকালে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন, জয়পুরহাট পাঁচবিবি উপজেলার বাঁশখুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান, একই উপজেলার তাজপুর গ্রামের মোস্তাকিম হোসাইন ও আক্কেলপুরের গোপীনাথপুর এলাকার সানজিদা বেগম।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারসহ অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে আসা তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার ১২টি কেন্দ্রে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসবের মধ্যে জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও জয়পুরহাট সিদ্দিকিয়া কামিল মডেল মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারসহ অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন।
অন্যদিকে কুষ্টিয়ায় শিট পরিবর্তন করার অভিযোগে সুমন (২৭) নামে এক যুবককে ৭ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া শিটের নির্ধারিত অংশ পূরণ না করায় পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গতকাল সকালের দিকে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মহসীন উদ্দীন এ সাজা দেন। রায় ঘোষণার পর অভিযুক্তকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। সাজাপ্রাপ্ত সুমন মিরপুর উপজেলার রামনগর রফিকুল ইসলামের ছেলে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের মতো কুষ্টিয়াতেও দ্বিতীয় ধাপে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুল কেন্দ্রে ৬৩০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৩৮ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষা দেয়ার সময় অভিযুক্ত যুবক ওএমআর শিট পরিবর্তন করেন। বিষয়টি দায়িত্ব থাকা পরীক্ষকের নজরে এলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।