জাহাজ আমদানিতে শুল্ক-ভ্যাট কমালে রডের বাজার স্থিতিশীল থাকবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট কমানো হলে রডের বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ)। সেজন্য স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক। এ সময় এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশন, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা তাদের দাবি পেশ করেন।

বিএসবিআরএ’র সহসভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, স্ক্র্যাপ জাহাজের আন্তর্জাতিক বাজারদর টনপ্রতি ৩৫০ ডলার থেকে ৬৩০ ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে ডলারের মূল্য ৮৫ টাকা থেকে ৮৮ টাকা হওয়ায় জাহাজের মূল্য আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে টনপ্রতি রডসহ অন্যান্য সামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার বিরূপ প্রভাব দেশের অবকাঠামো বিনির্মাণ খাতের ওপর পড়ায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, তাই রডজাতীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে স্ক্র্যাপ জাহাজের আমদানি শুল্ক টনপ্রতি এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করার জন্য অনুরোধ করছি। সেইসঙ্গে সরবরাহ পর্যায়ে প্রতি টন রডের ওপর প্রযোজ্য মূসক এক হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫০০ টাকা করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি আমাদের প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিলে রডের বাজার স্থিতিশীল হবে।

সংগঠনের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম পুরোনো জাহাজের সঙ্গে আসা লুব অয়েলের শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান। তিনি বলেন, সমুদ্রগামী জাহাজ স্ক্র্যাপ ঘোষণার পর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছাতে স্বল্প পরিমাণ তেলজাতীয় পদার্থ থাকাটা স্বাভাবিক। জাহাজে কয়েক রকমের তেল পাওয়া যায়, যার মধ্যে আছে ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল ও ডিজেল অয়েল প্রভৃতি। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের না জানিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাধারণ বিজ্ঞপ্তি নং-৫৫-এর আলোকে ব্যবহƒত লুব অয়েলের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ অবচয় সুবিধা প্রত্যাহার করে নতুন ও পুরোনো লুব অয়েলের জন্য একই হারে শুল্ক আদায় করছে, যা দিয়ে তেলজাতীয় পদার্থ বিক্রি করে পরিশোধিত শুল্কের টাকা ওঠে না। এ অবস্থায় সাধারণ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে পোড়া মবিল ও তেলবর্জ্যরে ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।

আলোচনায় বাংলাদেশ ওশান গোয়িং শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশি পতাকাবাহী স্থানীয় মালিকানাধীন জাহাজে বিদেশে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে প্রাপ্ত পরিবহন ভাড়ার ওপর উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির সম্পাদক এএসএম আব্দুল বাতেন এ বিষয়ে বলেন, দেশের সমুদ্রগামী জাহাজ পরিবহনের ব্যবসা সম্প্রসারণে ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে পরিবহন ভাড়ার ওপর প্রযোজ্য পাঁচ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানাই। একই সঙ্গে নতুন সমুদ্রগামী জাহাজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে এক শতাংশ অগ্রিম আয়কর মওকুফ করার প্রস্তাব করছি।

অপরদিকে পুরোনো জাহাজ ভাঙতে গিয়ে প্রতি বছর শত শত শ্রমিক মারা যাচ্ছেন। এ মৃত্যু বন্ধ করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান মো. মাসুদ সাদিক। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর পুরোনো জাহাজ ভাঙতে গিয়ে শত শত শ্রমিক মারা যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কেন? রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে শ্রমিকমৃত্যু বন্ধ করতে হবে। গার্মেন্ট খাতে কোনো দুর্ঘটনা হলে বড় ধরনের পদক্ষেপ দেখতে পাই। আপনারা কেন শিপইয়ার্ডগুলোকে আধুনিক করছেন না?’ এসব প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিকমৃত্যুর হার অনেক কমে এসেছে। আগামীতে আশা করছি এটা বন্ধ হবে। আমরা এখন গ্রিন শিপইয়ার্ড রূপান্তরের দিকে যাচ্ছি। এরই মধ্যে তিনটি শিপইয়ার্ড গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরিত করেছি। আরও ১০টির কাজ চলমান রয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে তালিকভুক্ত সব শিপইয়ার্ড গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। দেশের শিল্প খাতগুলোর মধ্যে বড় ঝুঁকিপূর্ণ খাত হিসেবে পরিচিত জাহাজ ভাঙা শিল্প। গত এক দশকে এ খাতেই শ্রমিক মারা গেছেন ১৫৬ জন। শোভন কর্মপরিবেশ না থাকা এবং শ্রমিকমৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় দেশের শিপইয়ার্ডগুলোকে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরের নির্দেশনা রয়েছে বিদেশি ক্রেতাদের।’

আলোচনায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সুলতান হোসেন খান ‘কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা, ২০২০’ সংশোধনের প্রস্তাব করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০