Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:01 am

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনা ও বাস্তবতা

 

‘পাঁচ বছরে রফতানি ২৫ জাহাজ’ শিরোনামে গতকালের শেয়ার বিজে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, তা আমাদের চিন্তিত না করে পারে না। তার কারণ প্রধানত এই যে, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে এখনও স্বপ্ন দেখে জনগণ। অনেকের মতে, তৈরি পোশাকশিল্পের পর বাংলাদেশের রফতানি আয়ের অন্যতম উৎস হতে চলেছে এই নির্মাণ শিল্প। সঠিক সময়ে জাহাজ সরবরাহের ক্ষমতা ও অপেক্ষাকৃত কম দামে মানসম্পন্ন নির্মাণের কারণে স্থানীয় জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এমনকি ইউরোপের মতো অগ্রসর অঞ্চলে সাড়া ফেলতে পেরেছিল বলেই জানা যায়। কথা হলো, স্থানীয় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে জাহাজ নির্মাণ শ্রমিকের মজুরি বেশ কম। ফলে উৎপাদন ব্যয়ের দিক থেকে নিঃসন্দেহে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আমাদেরই বেশি। আবার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন বা ভিয়েতনামের মতো বেশকিছু জাহাজ নির্মাণকারী দেশের কাছে এত বেশিসংখ্যক জাহাজের ওয়ার্ক অর্ডার রয়েছে যে, তারা বাধ্য হচ্ছে ক্রমেই হালকা জাহাজ নির্মাণ থেকে সরে আসতে। এ অবস্থায় আমাদের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বৈকি। তবে সুযোগটি যে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না, তার প্রমাণ গত পাঁচ বছরে ২৫টি জাহাজ নির্মাণ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আয় করেছেন মাত্র ১৫ কোটি ডলার। সম্ভাবনার তুলনায় এ বাস্তবতা নিতান্ত অপ্রতুল।

প্রশ্ন হলো, বিপুল সম্ভাবনা দেখানো শিল্প খাতটির এমন দুর্দশা কেন? সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা প্রথমেই দায়ী করেছেন বিশ্বমন্দাকে। এ যুক্তি আমরা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারি না। দ্বিতীয়ত একশ্রেণির ব্যবসায়ী বলছেন, ব্যাংক ঋণ নেওয়ার বেলায় উপযুক্ত সহায়তা পাচ্ছেন না তারা। জাহাজ নির্মাণের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ তথা ঋণের প্রয়োজন হয়। এখন অন্যান্য খাতের বেলায় ওই সময়ের জন্য যে সুদ দিতে হয়, তা যদি জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বেলায়ও প্রয়োগ হয়, সেটি সমস্যা। এ যুক্তিও অগ্রাহ্য করার মতো নয়। তৃতীয়ত তারা বলছেন, অন্যান্য দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশে যে ধরনের ও যে পরিমাণে প্রণোদনা দেওয়া হয়, তার ঘাটতি রয়েছে এ দেশে। তাদের বক্তব্য, সরকার যদি জাহাজ নির্মাণ খাতে ৩০ শতাংশ হারেও প্রণোদনা দেয়, এক বছরের মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পেতে পারেন কমপক্ষে ১৫ হাজার কোটি টাকার কার্যাদেশ। জানা নেই, যে ব্যবসায়ীরা এ প্রাক্কলনটি করেছেন, তারা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আদৌ আমলে নিয়েছেন কি না। যদি হিসাবটি আন্তর্জাতিক বাজারের চলমান বাস্তবতা নিয়ে করা হয়ে থাকে, তাহলে উল্টো কেউ কেউ জিজ্ঞেস করতে পারেন, যদি ৩০ শতাংশ প্রণোদনায় এক বছরে আয় ১৫ হাজার কোটি টাকা হয়, তাহলে প্রণোদনা ব্যতিরেকে পাঁচ বছরে আয় ২০০ কোটি তথা এক বছরে আয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা হয় কীভাবে? এক্ষেত্রে প্রাক্কলন ও ফলাফলের মাঝে এতটা ফারাক কেন? এর কী ব্যাখ্যা দেবেন সংশ্লিষ্টরা? উপরন্তু জাহাজ নির্মাণ শিল্পে একশ্রেণির প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকঋণের ‘নয়-ছয়’ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। সেগুলোর সত্যতার ব্যাপারেও তাদের কিছু জানানোর রয়েছে কি? জাহাজ নির্মাণ শিল্প অবশ্যই আমাদের জন্য সম্ভাবনাময়। এর উপযুক্ত বিকাশে প্রণোদনারও দরকার আছে হয়তো। তার আগে শিল্প খাতটিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কতটা জরুরি, সেটিও চিহ্নিত করা উচিত।