জাহাজ ভাঙা শিল্পে দ্বৈত শুল্ক প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: আমদানিকৃত পুরো স্ক্র্যাপ জাহাজের যে ওজন করা হয় তাকে ‘লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজ’ বা এলডিটি বলা হয়। সেই এলডিটি হিসেবে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজের প্রতি টনে ১৫শ টাকা করে আমদানি শুল্ক বা কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করেন শিপইয়ার্ড মালিকেরা। কিন্তু জাহাজের জেনারেটর ও অন্যান্য ফিটিংসের জন্য আলাদাভাবে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ একই জিনিসের দুইবার শুল্ক পরিশোধ করা বা দ্বৈত কর আদায়ের কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, দেশে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানির পর জাহাজের জেনারেটর, বিভিন্ন ফিটিংস ও অন্যান্য সব যন্ত্রপাতিসহ জাহাজের যে ওজন করা হয় তাকে ‘লাইট ডিসপ্লেসমেন্ট টনেজ’ বা এলডিটি বলা হয়। সেই এলডিটি হিসেবে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ জাহাজের প্রতি টনে ১৫শ টাকা করে আমদানি শুল্ক বা কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করেন শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড মালিকেরা। কিন্তু দেখা যায়, এলডিটি হিসেবে শুল্ক পরিশোধ করার পরেও জাহাজের জেনারেটর ও অন্যান্য ফিটিংসের জন্য আলাদাভাবে শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ একবার পুরো জাহাজের ওজনের মধ্যে জেনারেটরসহ অন্যান্য ফিটিংসের শুল্ক দিতে হচ্ছে, আবার পরে

 জেনারেটর ও অন্যান্য ফিটিংসের আলাদাভাবে শুল্ক দিতে হচ্ছে। এভাবে একই জিনিসের দুইবার শুল্ক পরিশোধ করা বা দ্বৈত কর আদায়ের কারণে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমাদানিকারকদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়া জাহাজ পরিচালনার জন্য ফার্নেস অয়েল, লুব অয়েল, ডিজেল অয়েল ইত্যাদি নেয়া হয়।

২০০৮ সালে সাধারণ বিজ্ঞপ্তি (নং-৫৫) জারি করে এসব তেল ও লুব অয়েলের নির্ধারণ করেছিল এবং সেই হিসেবে শুল্ক আদায়ও করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ৫/৬ বছর ধরে কাস্টম কর্তৃপক্ষ ওই সাধারণ বিজ্ঞপ্তি (নং-৫৫) না মেনে স্ক্র্যাপ জাহাজের ব্যবহƒত লুব অয়েলের ট্যারিফ মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ৪০% অবচয় সুবিধা প্রত্যাহার করে। বর্তমানে ব্যবহƒত লুব অয়েল ও ফ্রেশ লুব অয়েলের জন্য টনপ্রতি ২ হাজার ডলার ট্যারিফ মূল্য ধার্য করে তার ভিত্তিতে শুল্ক আদায় করছে। বর্তমানে ওই ব্যবহƒত লুব অয়েলের জন্য বাংলাদেশি টাকায় প্রতি টনের জন্য প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। ফলে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিকারক অর্থাৎ ইয়ার্ড মালিকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বেশ কয়েকজন জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড মালিকরা বলেন, ২৫ থেকে ২০ বছরের একটি জাহাজ ব্যবহার অনুযোগী বলেও তো স্ক্র্যাব জাহাজ হিসাবে সেল হয়। তেমনি এসব জাহাজের এসি, জেনারেটর, ক্যাবল ইত্যাদি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ব্যবহার হওয়ার এগুলো স্ক্র্যাপ পর্যায়ে চলে গেছে। এসব পণ্যের পুনঃবিক্রয় মূল্য খুবই নগণ্য বিধায় এগুলোর জন্য ৮০%-৯০% অবচয় সুবিধা প্রদান করা উচিত। তাই স্ক্র্যাব জাহাজের জেনারেটর, এসি, ক্যাবল ইত্যাদি ফিটিংসের জন্য এলডিটি’র ভিত্তিতে একবার শুষ্ক আদায় করা হচ্ছে বিধায় ওই একই জিনিসে জন্য দ্বিতীয়বার শুল্ক আদায়ের অযৌক্তিক নিয়ম বাতিল করা প্রয়োজন। একইভাবে জাহাজে ব্যবহƒত ‘লুব অয়েল ইন ট্যাঙ্ক’ এর রি-সেল মূল্য খুবই নগণ্য। এমনকি ওই লুব ওয়েল বিক্রি করে পরিশোধিত শুল্কের টাকাও পাওয়া যায় না। তাই আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে কাস্টমসের ওই সাধারণ বিজ্ঞপ্তিতে (নং-৫৫) (সংশোধন পূর্বাবস্থা) যে ৪০% অবচয় সুয়োগ রাখা উচিত। এমনিতে ডলার সংকটে জাহাজ আমদানি কমেছে। তাই আগামী বাজেটে এলডিটি শুল্কের বাইরে স্ক্র্যাপ জাহাজের জেনারেটরসহ অন্যান্য ফিটিংসের আলাদা অযৌক্তিক শুল্ক আদায় বন্ধ করার নির্দেশনা দেখতে চাই।

উল্লেখ, দেশের ইস্পাত কারখানাগুলোর বেশির ভাগের কাঁচামালের প্রধান উৎস অধিকাংশই জাহাজের স্ক্র্যাব। কয়েক বছর আগে বছরের ৩৫-৪০ লাখ টন স্ক্র্যাবের যোগান হলেও বর্তমানে ১৫-১৭ লাখ টন কাঁচামাল এসব ইয়ার্ড থেকে যোগান পাওয়া যাচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০