Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:35 am

জাহাজ ভাঙা শ্রমিকদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন

দেশের জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকের জন্য অনিরাপদ রয়েই গেল। প্রতি বছর কোনো না কোনো ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা আহত ও নিহত হন। গত এক দশকে চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলোয় ১৪২ শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং শতাধিক শ্রমিক আহত হন। এসব দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়। আর ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা নামমাত্র ক্ষতিপূরণ পান। কিন্তু কোনো ইয়ার্ডে কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় না। এমনকি মালিকরা শাস্তি পান না। এসব ঘটনায় তেমন মামলাও হয় না।

বেসরকারি সংস্থা জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের গবেষণার তথ্য এক দশক ধরেই উদ্বেগজনক। সংস্থার সূত্রে জানা যায়, জাহাজ ভাঙার কাজে ২০১৪ সালে ৯, ২০১৫ সালে ১৬, ২০১৬ সালে ১৭, ২০১৭ সালে ১৫, ২০১৮ সালে ২০, ২০১৯ সালে ২২, ২০২০ সালে ১১, ২০২১ সালে ১৪, ২০২২ সালে ১০, ২০২৩ সালে আট এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুজন মারা গেছেন। সর্বশেষ কয়েক দিন আগে সীতাকুণ্ডে এসএন করপোরেশনের শিপ ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণে ১২ জন দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। এখনও বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অথচ এ গ্রিন শিপইয়ার্ড সনদপ্রাপ্ত ইয়ার্ডে এটি ইতিহাসের একটি বড় দুর্ঘটনা। এক্ষেত্রে সরকারি ও আন্তর্জাতিক নানা তৎপরতার পরও এসব ইয়ার্ডে মৃত্যুর ঘটনা থামানো যাচ্ছে না।

নানা কারণেই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বাংলাদেশ অন্যতম স্থান হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তুলনামূলকভাবে কম খরচ। এতে বিপুলসংখ্যক দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, কুমিরা, জোড়ামতল, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল, ভাটিয়ারী, ফৌজদারহাট, শীতলপুর, বারো আউলিয়া প্রভৃতি এলাকার সাগরপারে গড়ে উঠেছে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের সিংহভাগ। কিন্তু এসব জাহাজ ভাঙা শ্রমিকরা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

প্রতি বছরই এসব ইয়ার্ডে সনাতনী পদ্ধতিতে জাহাজ কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণে, বিষাক্ত গ্যাসে দম বন্ধ হওয়ায় এবং লোহার পাত পড়ায় প্রাণ হারান অনেক শ্রমিক। এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট, ক্যানসারসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধির ঝুঁকি তো আছেই। পঙ্গুত্ববরণ করছেন অনেক শ্রমিক। এসব শ্রমিকের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি না, সেটি দেখতে হবে। রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর বড় সংকটে পড়েছিল পোশাক খাত। এ ধরনের বিপর্যয়ের আগেই জাহাজশিল্প শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা ও তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো অনিয়ম যেন সম্ভাবনাময় এ শিল্পের গতিপথ রুদ্ধ করতে না পারে।

জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পুরোনো জাহাজ ব্যবহার করা হয়। এসব জাহাজে তেজস্ক্রিয়তা ও ক্ষতিকর বর্জ্য থাকতে পারে। শ্রমিকদের নিরাপত্তায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ছাড়পত্র পাওয়ার পর জাহাজ কাটা শুরু করার বিধান চালু করতে হবে। পরিত্যক্ত জাহাজ কাটার ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘পরিবেশগত ছাড়পত্র’ বাধ্যতামূলক। এ নিয়ম ঠিকমতো পরিপালিত হলে নিয়মিত দুর্ঘটনায় শ্রমিক হতাহতের ঘটনা ঘটত না। জাহাজ ভাঙা শিল্প পরিবেশবান্ধব করা গেলেই শ্র্রমিকদের সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।