Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:03 am

জিআর প্রকল্পের চাল আত্মসাৎ: জীবননগরের পিআইওসহ দুজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ভুয়া তালিকার মাধ্যমে খয়রাতি সাহায্য (জিআর) প্রকল্পের ৬০০ টন চাল আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এই অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আশরাফ হোসেন ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. সাইফুর রহমান মালিক।

মো. আশরাফ হোসেন বর্তমানে দামুড়হুদা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ায় মামলাটি (নম্বর-৫) দায়ের করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো. আব্দুল মাজেদ। এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি কমিশন থেকে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে খয়রাতি সাহায্য (জিআর) প্রকল্পের আওতায় এতিমখানা, লিল্লাহ্ বোডিং, অনাথ আশ্রম, শিশু সদন, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০০ স্থান ও পিআইসির জন্য তিন মেট্রিক টনসহ মোট ৬০০ টন চাল চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কোনো প্রকার প্রস্তাব বা চাহিদাপত্র না থাকা সত্ত্বেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে ২০১৬ সালের ২৬ জুন বরাদ্দ এ দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যৌথ প্রস্তাব ও স্বাক্ষরে ওই বছরের ৩০ জুন স্থানীয় খাদ্য গুদাম থেকে ৬০০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়। কিন্তু নিয়ম হলো, খয়রাতি সাহায্যের প্রাপকদের আবেদনের ভিত্তিতে পিআইও অফিস হতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব যেতে হবে। অথচ চাল বরাদ্দ আসার পর ২০০ জনের আবেদন সংগ্রহ করা হয়েছে। আর প্রাপ্ত আবেদনপত্রে জীবননগর পিআইও অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক সাইফুর রহমান মানিক অ্যাডভান্স রেজিস্ট্রারে কথিত আবেদনকারীদের নাম লিপিবদ্ধ করেন।

রেজিস্ট্রার দেখে আবেদনপত্রের স্বাক্ষরের সঙ্গে অ্যাডভান্স রেজিস্ট্রারে দেওয়া আবেদনকারীর স্বাক্ষর মিল পায়নি দুদক। রেজিস্ট্রারের লেখা ও স্বাক্ষর একই কালিতে লেখা। আর তালিকা সংগ্রহের সঙ্গে যারা জড়িত তারাই এই সব আবেদনে বর্ণিত ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে তালিকা অনুমোদন ও বরাদ্দ গ্রহণে ভূমিকা পালন করেছে।

যেহেতু আবেদনের স্বাক্ষরের সঙ্গে অ্যাডভান্স রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরের কোনো সাদৃশ্য নেই, তাই ভুয়া আবেদন তৈরি ও অ্যাডভান্স রেজিস্ট্রারে জাল স্বাক্ষর দিয়ে ৬০০ মেট্রিক টন চাল আত্মসাতের সঙ্গে তারা দুজন সরাসরি জড়িত বলে দুদকের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রতি মেট্রিক টন চালের মূল্য ৩৬ হাজার ৩৩৫.৫০ টাকা। তাই সে হিসেবে আত্মসাৎ করা ৬০০ মেট্রিক টন চালের মূল্য হয় ২ কোটি ১৮ লাখ ১ হাজার ৩০০ টাকা।

জিআর সাহায্যের চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪৬৬/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীত প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।