নিজস্ব প্রতিবেদক: জনবলের অভাব ও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত না থাকায় নিজেদের কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর ও আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে জিইডির। তবে এসব প্রতিবেদন প্রণয়নের জন্য যেসব ডেটা বা উপাত্ত দরকার হয়, সেগুলো প্রণয়ন করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। কিন্তু বিবিএস থেকে হালনাগাদ উপাত্ত না পাওয়ায় ওইসব প্রতিবেদনের কাজ এগোতে পারছে না জিইডি। পাশাপাশি সংস্থাটিতে জনবল সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এসব কারণে জিইডির কাজে ধীর গতি দেখা দিয়েছে।
জিইডি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন, ২০২২’ প্রণয়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুসারে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যবর্তী মূল্যায়ন ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়নের কথা রয়েছে। এছাড়া জিইডির একটি নিয়মিত কাজ হচ্ছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্বিতীয় এসডিজি অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করা। কিন্তু এসব ডকুমেন্ট প্রণয়নের জন্য যেসব উপাত্ত প্রয়োজন, তা দীর্ঘদিন হালনাগাদ হয় না। বিশেষ করে এসব প্রতিবেদনের জন্য যেসব উপাত্ত দরকার হয়, তার মধ্যে রয়েছে খানা আয়-ব্যয় জরিপ (এইচআইইএস বা হেইস), শ্রমশক্তি জরিপ ও বহু সূচকবিশিষ্ট গুচ্ছ
জরিপের (মিকস) তথ্য। কিন্তু ২০১৬ সালের পর হেইস ডেটা হালনাগাদ হয়নি। আগামী বছরের এপ্রিল নাগাদ এ উপাত্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করছে জিইডি। এছাড়া ২০১৭ সালের পর শ্রমশক্তি জরিপ প্রতিবেদন তৈরি হয়নি। আর সর্বশেষ মিকস ডেটা আছে ২০১৯ সালের। এসব উপাত্ত তৈরির দায়িত্ব বিবিএসের। এসব পুরোনো উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হলে দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে না বলে মনে করে জিইডি। সেজন্য সংস্থাটি হালনাগাদ উপাত্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
এছাড়া গত বছরের শেষ দিক থেকে জিইডির গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা সরকারের অন্যান্য দপ্তরে বদলি হয়ে গেছেন। নতুন করে বেশ কয়েকজনকে জিইডিতে পদায়ন করা হলেও তারা যোগদান করেননি। জিইডির সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রথম শ্রেণির ডেস্ক পর্যায়ের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৩৩টি। সেখানে বর্তমানে আছেন ১৮ জন। কয়েক মাস আগে এ সংখ্যা আরও কম ছিল। এখনও ১৫টি পদ শূন্য। তাছাড়া বর্তমান কর্তকর্তাদের মধ্যেও অর্থনীতির মৌলিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা আছে, এমন কর্মকর্তার সংখ্যা পাঁচজনের বেশি নয় বলে জানিয়েছে জিইডি। এসব কারণে সংস্থাটির কাজ এগিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডি সদস্য (সচিব) মো. কাউসার আহাম্মদ বলেন, ‘আমরা হালনাদাগ উপাত্তের অপেক্ষায় আছি। হালনাগাদ উপাত্ত না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কাজে গতি আনা কঠিন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন প্রণয়নের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যায়নি। জিইডি যেসব প্রতিবেদন প্রণয়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেগুলো প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি। তাছাড়া আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। তবে অচীরেই জনবল সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি। সবমিলে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব প্রতিবেদন প্রণয়ন সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি।’