শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতে অভিন্ন কর ব্যবস্থা গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) চালু হওয়ার পর প্রথম কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। গতকাল সোমবার বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে (বিএসই) বিভিন্ন সূচক পয়েন্ট চাঙা ছিল। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এদিন সেনসেক্স সূচকটি ৩০০ পয়েন্ট বেড়ে ৩১ হাজার ২২১ পয়েন্টে অবস্থান করে। নিফটি সূচকও এদিন ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে ৯ হাজার ৬০০ এ পৌঁছায়।
বিএসইতে এদিন ১০০-এর বেশি কোম্পানির শেয়ারদর এ দিন এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে লেনদেন করে। এ ছাড়া প্রায় ২৭টি কোম্পানির শেয়ারদর রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
ব্রোকারেজ হাউজগুলো পুঁজিবাজারের এ চাঙা ভাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তারা এ বাজারে আরও সম্ভাবনা খুঁজে পাচ্ছে।
বিএসইতে গতকাল সবচেয়ে বেশি চাঙা ছিল আইটিসি খাত। এ খাতের সূচক এ দিন নয় শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এরপরই ছিল এফএমসিজি, টেলিকম, মেটাল খাত।
১ জুলাই থেকে ভারতে চালু হয় জিএসটি। নতুন এ কর ব্যবস্থায় এখন থেকে পণ্য ও পরিষেবায় পাঁচ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের নতুন ভ্যাট ব্যবস্থা গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্সের (জিএসটি) বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিবাদ হয়েছে। ১৮ ও ২৮ শতাংশ কর নিয়েই বেশি বিতর্ক দেখা দেয়।
সরকারের পক্ষ থেকে এ ভ্যাটকে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন যাত্রার প্রদর্শক হিসেবে দেখা হচ্ছে। দাবি করা হয়েছে, এতে রাজস্ব বৃদ্ধি, পণ্যের দামের সরলীকরণ হবে। আগামীতে সার্বিক কর নীতির প্রয়োগ আরও সহজ হবে। জিডিপি বৃদ্ধি হতে পারে এক দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে।
কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ভ্যাটের বিরুদ্ধে সন্তুষ্ট নন ব্যবসায়ীরা। ভ্যাট চালুর প্রথম দিনেই রাস্তায় নেমেছে তারা। শনিবার ভারতজুড়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদের মিছিল বের হতে দেখা যায়।
ভ্যাটের প্রতিবাদে এদিন তামিলনাড়–তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বিশেষ করে সিনেমা হল মালিকরা, আতশবাজি, দেয়াশলাই ও গার্মেন্ট কারখানাগুলো তাদের ব্যবসা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।
আঞ্চলিক সিনেমার টিকিটের ওপর পণ্য ও পরিষেবা করের হার নিতে তীব্র আপত্তি দেশজুড়ে। আর এর প্রতিবাদে সোমবার থেকে ৯৫০টি সিনেমা হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তামিলনাড়–র হল মালিকরা। তারা অনলাইনে টিকিট বুকিংও সাময়িক বন্ধ রেখেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের মুখে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা জিএসটিতে ৩০ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ করের বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বসবে।
জিএসটিতে ২৮ শতাংশ করের প্রতিবাদে তামিলনাড়–র বেশকিছু এলাকায় দেয়াশলাই ও আতজবাজি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তাদের আশঙ্কা, নতুন জিএসটিতে ভারতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দিন শেষ, চীন থেকে আমদানি বাড়বে।
এস সুরেন্দার নামে এক ব্যবসায়ী নেতা জানান, জিএসটি প্রস্তাব টেক্সটাইল, অন্যান্য ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের ওপর ব্যাপকভাবে নেতিবাচব প্রভাব ফেলবে। নতুন কর অনুযায়ী, কটন সুতায় পাঁচ শতাংশ এবং সিনথেটিক সুতায় ১৮ শতাংশ জিএসটি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া ডাইং, ব্লিচিং, কালারিং ও প্যাকেজিংয়ে ভিন্ন হারে কর বসানো হয়েছে।
গুজরাটে জিএসটি নিয়ে ডায়মন্ড ব্যবসায়ীরা গত শনিবার থেকে বিক্ষোভ করছে। তারা বলছে, ২৮ শতাংশ কর ভারতে এ শিল্পকে তছনছ করে দেবে। ডায়মন্ড ব্যবসায়ীদের সোমবার এ নিয়ে রাজ্যের উপপ্রধান মন্ত্রী নিতিন প্যাটেলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
কাশ্মীরে বিরোধীদলীয় নেতারা জিএসটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের এ বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছে। এ এলাকায়ও অধিকাংশ ব্যবসায়ী ভ্যাটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অনড়। এদিকে মধ্যপ্রদেশের খুচরা বাজার এখন মরুভূমি। পশ্চিমবঙ্গেও একই অবস্থা। এ রাজ্যের অধিকাংশ ব্যবসায়ী শনিবার বিক্ষোভ করার পর তাদের দোকানপাট বন্ধ রেখেছে।