শেয়ার বিজ ডেস্ক: সরকারের সঙ্গে সরকারের (জিটুজি) উদ্যোগের অধীনে বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। সূত্র: বাসস।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত ও চীনের মতো বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জিটুজি প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। কারণ ওইসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি (লাইন্স অব ক্রেডিট) রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে কালবিলম্ব বা অবহেলা করা যাবে না। কারণ এসব উদ্যোগ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী পরিকল্পনা কমিশনকে বৈদেশিক অর্থায়নের প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, আজকের একনেক সভায় মোট ১১ হাজার ৩৮৭ দশমিক ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ের মোট ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মান্নান আরও বলেন, ‘মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অংশ থেকে সাত হাজার ৪৪৫ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা, ৮০ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে এবং বাকি তিন হাজার ৮৬১ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসাবে আসবে।’
১৮টি অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, নয়টি নতুন ও ৯টি সংশোধিত প্রকল্প। এছাড়া বৈঠকে একটি প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে সময়সীমা বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে কঠোরতা বজায় রাখতে এবং এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আবার নির্দেশ দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে শেখ হাসিনা বিভিন্ন বাজার ও কাঁচাবাজারের পণ্যের দামের পার্থক্য থাকায় গবেষণা পরিচালনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বর্তমান ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রবণতা এবং দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতির কারণে লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা। মূল্যস্ফীতি কমবে বলে তার আগের ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করে মান্নান বলেন, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা কমেনি, বরং বেড়েছে, যার জন্য সরকার তার উপলব্ধ উপকরণ ব্যবহার করার মতো যা যা প্রয়োজন তা করবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রথম কৌশল হবে এটিকে আরও বাড়তে না দেয়া এবং তারপর তা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শুধু মার্কিন ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, এটা ঠিক নয়। এর পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। মার্কিন ডলার ছাড়া অন্যান্য মুদ্রার সঙ্গে বাণিজ্য পরিচালনার প্রচেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখনও ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে। তবে এটি আবারও ৫০ বিলিয়ন ডলারে যেতে পারে।’
আগামী অর্থবছরে (অর্থবছর-২৪) মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে রাখার বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ করে মান্নান বলেন, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে কিছু উদ্বেগ থাকতে পারে, তবে সামনে এমন লক্ষ্য রাখা ভুল নয়।
ইইউতে মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে বলে উল্লেখ করে মান্নান বলেন, আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনা কঠিন হলেও মূল্যস্ফীতি কমাতে আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের প্রক্রিয়াটি (সাপ্লাই চেইন) মসৃণ রাখতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে. কোনো ধ্বংসাত্মক উপাদান যেন প্রক্রিয়াটিকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে। অন্যথায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
সভার শুরুতেই একনেক বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য এত চমৎকার বাজেট প্রণয়ন করায় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানায়।
এমএ মান্নান বলেন, প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সরকার আরও কঠোর হবে এবং অনুমোদন দেয়ার আগে প্রকল্প প্রস্তাব গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রবাসীদের দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে সরকার এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনি বলেন, ‘যদিও কিছু বেসরকারি ব্যাংক রেমিট্যান্স পাঠাতে সরকার-নির্ধারিত আড়াই শতাংশের বাইরে কিছু বাড়তি প্রণোদনা দিচ্ছে, তবে এই হার বাড়ানোর বিষয়ে সরকার এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়নি।’
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারের বিপুল আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে যে, ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভোট চাইতে সরকার দৃঢ় মনোবল নিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে পারবে।
