জিডিপির অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কমেছে বরাদ্দ

মাসুম বিল্লাহ: আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার পরিমাণ বাড়েনি। এসব খাতে ভাতাভোগীর সংখ্যাও বাড়েনি। তবে প্রতিবন্ধী ভাতার পরিমাণ ও ভাতাভোগীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আর সার্বিকভাবে বর্তমান অর্থবছরের তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়লেও দেশের মোট জিডিপির অনুপাতে এ খাতে বরাদ্দ কমেছে।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছিল এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট জিডিপির তিন ১১ শতাংশ ছিল। আর আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। এটি প্রাক্কলিত মোট জিডিপির দুই দশমিক ৫৫ শতাংশ। তাছাড়া মোট বাজেটের অংশ হিসেবেও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে এ আকার আরও বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ দশমিক ৭৮ শতাংশে উন্নীত হয়। আর আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে কয়েক মাস আগে জিডিপি হিসাবের ভিত্তিবছর পরিবর্তন করায় হঠাৎ করে মোট জিডিপির আকার বেড়ে যায়। এ কারণে জিডিপির অনুপাতে এ খাতে বরাদ্দ কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। তবে সার্বিক হিসাবে বাজেটের মোট আকার বৃদ্ধির অনুপাতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি, বরং কমেছে।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, সরকার দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রবীণদের অধিকার সমুন্নত রাখায় সচেষ্ট। দুস্থ প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় ব্যাপক পরিসরে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার ক্ষেত্রে প্রবীণ নারীকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ৫৭ লাখ এক হাজার ভাতাভোগীর জন্য বয়স্ক ভাতা খাতে তিন হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, আগামী অর্থবছরেও এটি চলমান থাকবে। অর্থাৎ এ খাতে কোনো বরাদ্দ বাড়ছে না।

অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ লাখ আট হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হারে ভাতা দেয়া হয়েছে। এ খাতে উপকারভোগীর সংখ্যা আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে তিন লাখ ৫৭ হাজার বাড়িয়ে ২০ লাখ ৮০ হাজারের স্থলে ২৩ লাখ ৬৫ হাজারে উন্নীত করারপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া মাসিক ভাতার হার ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ দুই হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ভাতা কর্মসূচির বাইরেও সরকার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে যার উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল এক লাখ এবং বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৯৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। দেশের অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও জীবনঝুঁকি হ্রাসকল্পে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় ‘বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বীমা’ চলতি বছরের জাতীয় বীমা দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়েছে।

এর বাইরে কর্মজীবী মায়েদের জন্য ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র গর্ভবতী মায়ের জন্য বিদ্যমান মাতৃত্বকালীন ভাতা এবং শহর অঞ্চলের কম আয়ের ‘কর্মজীবী মায়েদের জন্য ল্যাকটেটিং ভাতা’Ñএ কর্মসূচি দুটিকে সমন্বিত করে ‘মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি’ নামে বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমাদের সরকার সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচিকে সর্বোত্তম বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করছে। ফলে এ কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ১২ লাখ ৫৪ হাজারে উন্নীত করার প্রস্তাব করছি।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০