নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে মোটামুটি প্রতি বছরই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ছিল। যদিও করোনার বছর তা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরের বছর তা কমে যায়। তবে আর্থিক পরিমাণ যা-ই হোক, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পাঁচ শতাংশের আশপাশেই ছিল। নগদ প্রণোদনা দিয়েও তা খুব একটা বাড়ানো যায়নি।
গত ছয় বছরের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড রেমিট্যান্স আসে। ওই অর্থবছর জিডিপির প্রায় ছয় শতাংশ রেমিট্যান্স এসেছিল। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, করোনার কারণে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, তাই বৈধ পথে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়। তবে বাকি পাঁচ বছরই তা জিডিপির পাঁচ শতাংশের কমই ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। ওই অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ছিল ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
২০১৮-১৯ অর্থবছর দেশে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। ওই অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে ওই অর্থবছর জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর পরের (২০১৯-২০) অর্থবছরে জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ওই অর্থবছর দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৮ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। ওই অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছর জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান বেড়ে দাঁড়ায় রেকর্ড ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশে। তবে গত শেষ দুই অর্থবছরে আবার অবনতি হয়। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছর জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ছিল ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। ওই অর্থবছর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে দাঁড়ায় ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে ওই বছর রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়।
সর্বশেষ বিদায়ী অর্থবছর রেমিট্যান্স আসে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। এ সময় রেমিট্যান্সের সামান্য প্রবৃদ্ধি হয়, যা ছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত অর্থবছর জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ছিল ৪ দশমকি ৭৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। দেশটির ২০২২ সালে রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ ছিল ১১১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। ২৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন রেমিট্যান্স আহরণ করে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তান।
অন্যদিকে ২০২২ সালে জিপিপিতে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ অবদান রেখে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে অবস্থান চতুর্থ স্থানে। জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদানে শীর্ষে রয়েছে নেপাল। দেশটির জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। ৭ দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রেখে পাকিস্তান রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ অবদান রেখে ভারতের অবস্থান ছয় নম্বরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে বেশি রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে তালিকায় প্রথমে ছিল সৌদি আরব। দেশটি থেকে বরাবরই বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আছে। প্রথম ১০ দেশের এই তালিকায় আরও রয়েছেÑআমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, ইতালি, মালয়েশিয়া, ওমান ও বাহরাইন। গত অর্থবছর সৌদি আরব থেকে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে।
আমেরিকা থেকে ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩ দশমিক ০৩ বিলিয়ন, যুক্তরাজ্য ২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন, কুয়েত ১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন, কাতার ১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন, ইতালি ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন, মালয়েশিয়া ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন, ওমান ৭৯০ মিলিয়ন ডলার এবং বাহরাইন থেকে এসেছে ৫২৮ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে দেশের প্রবাসী আয়ের অর্ধেকের বেশিই চার জেলায় কেন্দ্রীভূত। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে যত প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে, তার ৫২ শতাংশের বেশিই এসেছে এ চার জেলায়। এর মধ্যে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চট্টগ্রামে। এ জেলায় প্রবাসী আয়ে সর্বশেষ অর্থবছরে প্রায় ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। এর মধ্যে ১১ দশমিক ১১ ডলারই এসেছে উল্লিখিত চার জেলায়, যা ওই অর্থবছরের মোট প্রবাসী আয়ের ৫২ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় এসেছে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, চট্টগ্রামে ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, কুমিল্লায় ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার এবং সিলেটে ১ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।