চলছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচ। মিরপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে গ্যালারিতে বাংলাদেশি দর্শকদের হাতে থাকার কথা ছিল লাল-সবুজের পতাকা। কিন্তু দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। গ্যালারিতে দর্শকদের হাতে বাংলাদেশের পতাকার পাশাপাশি ছিল পাকিস্তানের পতাকাও। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আউট করলে বা পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেটার ছক্কা মারলে দর্শকদের উল্লাস দেখে বুঝার উপায় নেই এটা বাংলাদেশের মাঠ নাকি অন্য কোনো দেশের। গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ যেকোনো দেশ সমর্থন করতে পারে। কিন্তু যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা হচ্ছে, সেখানে এদেশের মানুষ নিজের দেশ রেখে সমর্থন করছে পাকিস্তানকে, তাদের দেশের পতাকা ওড়াচ্ছে, সেøাগান দিচ্ছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। প্রিয় জন্ম ভূমিকে ছোট করে অতিথি দেশকে নিয়ে এমন মাতামাতি করা আমাকে ব্যথিত করেছে। যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অন্য কোনো দেশের খেলা হতো তাহলে কোনো কথা ছিল না। যখন নিজ দেশের সঙ্গে অন্য কোনো দেশের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়, তখন নিজের দেশকে সমর্থন না করে অন্য দেশকে সমর্থন করাটা নিন্দনীয় তো নিশ্চয়ই, অপরাধও বটে। এমন কাজ যারা করেছে, তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানে কোনো অনুচ্ছেদ নেই। কিন্তু আইন দিয়ে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পাওয়া যায় না। নীতি-নৈতিকতা, দেশপ্রেম এগুলো হƒদয় থেকে উৎসারিত হতে হয়। অনেকেই আবার বলবেন ক্রিকেটকে ভালো না বাসলে বা ক্রিকেটকে সমর্থন না করলে কি দেশকে বিরোধিতা করা হলো? আমি বলব হ্যাঁ বিরোধিতা। কোনো দেশের জাতীয় ক্রিকেট দল যখন সে দেশের পতাকা, জাতীয় সংগীত বহন করে, তখন সেই দলের জয়-পরাজয় খোদ রাষ্ট্রেরই জয়-পরাজয় বলে ভাবার সুযোগ আসে। অনেকের আবার আছে খোঁড়া যুক্তি, পাকিস্তান ভালো খেলে তাই তাদের ক্রিকেটকে ভালোবেসে সমর্থন করি। ভালো খেলার জন্য সমর্থন করলে খেলা শেষে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ কেন আলাদা হয়ে গেলÑএই পরিতাপ করত না। কিংবা পাকিস্তান বাংলাদেশ দুটো একই দেশ দুটোই ভাই ভাই, যে হারুক-জিতুক আমাদের কোনো সমস্যা নেই এই কথা বলত না। গ্যালারিতে পাকিস্তানের পতাকা হাতে উল্লাসের পাশাপাশি আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। তা হলো পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের আগ্রাসী আচরণ ও ঔদ্ধত্য। বাংলাদেশি ক্রিকেটারের রান নেয়ার সময় লাথি মারতে উদ্ধত হওয়া, ক্রিজে থাকা বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে বিনা প্রয়োজনে টার্গেট করে বল ছুড়ে মেরে আহত করা, বাংলাদেশি ব্যাটার আউট হলে অবমাননাকর আচরণ-ইঙ্গিত করা কোনোভাবেই খেলার অংশ নয়। তাদের এই আচরণের জন্য তারা বিশ্ব ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী শাস্তিপ্রাপ্তও হয়েছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট এত এগিয়ে যাওয়ার পেছনে দর্শক-সমর্থকদেরও ভূমিকা রয়েছে। ভবিষ্যতে ভালো খেলার জন্য তাদের উৎসাহ জোগাতে হবে। হারলেও বাংলাদেশ, জিতলেও বাংলাদেশÑএমন মানসিকতা নিয়ে তাদের সমর্থন দিয়ে যাওয়া উচিত। এমনও তো হতে পারে, আমাদের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে টাইগাররা একদিন ভালো খেলে বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়েই দেশে ফিরবে। তাই ম্যাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও বলব আজ হয়নি তো কাল হবে, না হলে পরশু হবে। আপনারা পাশে না থাকলে আর হবেই না। হারি বা জিতি স্টেডিয়ামে আমাদের দেশের পতাকা উড়ুক চিৎকার হোক, বাংলাদেশ।
ইমরান হোসাইন
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়