জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরবরাহের সংকট না থাকলেও আড়তে ডিমের দাম বাড়ছে। অস্বস্তি আছে শীতের সবজিতেও। প্রায় প্রতিটি পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের থেকে আট-দশ টাকা বেশি দামে। আমদানি করা নতুন রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। রাজধানীতে ব্যবসায়ীরা গত সপ্তাহের ১৩০ টাকা কেজির রসুন এই সপ্তাহে বিক্রি করছেন ১৬০ টাকা দরে। ডিমের হালিতে দাম বেড়েছে তিন-চার টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, পবিত্র রমজান মাস যত ঘনিয়ে আসছে, জিনিসপত্রের দাম ততই বাড়ছে।

মিরপুর ১০ নম্বরের একটি কাঁচাবাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মিলন বলেন, সবজির বাজারে এসে তিনি দেখতে পান সবকিছুর দামই বাড়তি। ছুটির দিনে কাঁচাবাজারে আসা অধিকাংশ ক্রেতারই অভিযোগ, শীত শেষ না হলেও বাজারে প্রতিটি সবজিই আগের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখে গেছে, বাজারে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, আর বড়গুলো ৪০ টাকায়, বাঁধাকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় আর গাজর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।

একইভাবে নতুন আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, মিষ্টিকুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকায়, ব্রকলি প্রতিটি ৩০ টাকায় এবং শিম প্রতি কেজি ৫০ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে বেগুন প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৩০ টাকা, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় আর শসা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে করলা আরও বাড়তি দামে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি চলছে ১২০ টাকা এবং ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মহাখালী কাঁচাবাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা ক্রেতা হামিদুর রহমান বলেন, শীত এখনও শেষ হয়নি, তবুও বাজারে সবজির দাম বাড়তি। কিছুদিন আগেও যে সবজিগুলো ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিল, সেগুলোই ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়েনি।

মিরপুর শেওড়াপাড়ার সবজি বিক্রেতা জামাল বলেন, মোকামেই বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে। আসলে শীত কমে আসার সঙ্গে শীতের সবজিও কমে আসছে, পাশাপাশি উৎপাদন ও পরিবহন খরচও বাড়তির দিকে। এসব কারণে বেড়েছে সবজির দাম। অন্যান্য বছরে এই সময় সবজির দাম কমই থাকত, তবে এ বছর উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে।

বাজারে এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা দরে। গত সপ্তাহে এই মুরগির দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা কেজিতে। আর সোনালি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত।

কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগির খাবারের দামও বেড়েছে। ফলে মুরগির দামও বেড়ে গেছে। জানা গেছে, গত বছরের আগস্টের পর থেকে দফায় দফায় মুরগি খাদ্যের দাম বাড়ায় অনেক খামারি খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে মুরগির সংকট দেখা দেয়ায় ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দাম বেড়ে গেছে।

এদিকে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়, যা আগে ছিল ১২৫ টাকা।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি। টিসিবির হিসাবে, গত সপ্তাহে ফার্মের ডিম ৪৫ টাকা হালি বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪৭ টাকা হালি। কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ও রামপুরা বাজার ঘুরেও ফার্মের ডিমের বাড়তি দামের তথ্য পাওয়া গেছে।

কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা জানান, সরবরাহের সংকট না থাকলেও আড়তে ডিমের দাম বাড়ছে। কোথাও কোথাও ডিম ৫০ টাকা হালি বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বাজারভেদে হাঁসের ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়।

এদিকে ব্যবসায়ীরা আমদানি করা শুকনা মরিচ বিক্রি করছেন ৬৫০ টাকা কেজি দরে। তারা বলছেন, আগে যে শুকনো মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়, তা এখন ৬০০ টাকা ছাড়িয়েছে। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন সংকটে পণ্যটির রেকর্ড পরিমাণ দাম বেড়েছে। আসন্ন রমজানের আগে সরবরাহ না বাড়লে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

চিনির বাজার এখনও উত্তপ্ত রয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ১২০ টাকা। টিসিবি বলছে, গত এক বছরে দেশে আদার দাম মানভেদে ৫০ থেকে ১১০ শতাংশ, রসুনের দাম ৪৫ থেকে ১২৭ শতাংশ এবং শুকনো মরিচের দাম ৭৫ থেকে ১৫২ শতাংশ হয়েছিল। বাজারভেদে সরু মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের বিআর২৮ বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬২ টাকা। ভালো মানের নাজিরশাইল চালের কেজি ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। আর মোটা চাল বিক্রি হয় ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজি।

মাছের বাজারও চড়া। গতকাল বাজারে বোয়াল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া কাতল মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, পাবদা ৪৫০ টাকায়, মলা ৩৬০ টাকায়, শোল ৭০০ টাকায়, শিং মাছ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, পাঙাশ ১৮০ টাকায়, কই ২৬০ টাকায়, টেংরা ছোট ৫০০ এবং বড় ৬৫০ টাকায়, রুই ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায়, চিংড়ি ৬০০ টাকায় এবং গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০