Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:56 pm

জিসান গ্রুপের বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ

রহমত রহমান: জিসান গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। গ্রুপের গার্মেন্ট এক্সেসরিজ খাতের হ্যানজী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড (হ্যানসল) নামে প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধার কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আদমজী ইপিজেডের প্রতিষ্ঠান হ্যানসল কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে বলে দাবি করলেও বন্ড কর্তৃপক্ষের দাবি, এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
এ অভিযোগে জিসান গ্রুপের এ প্রতিষ্ঠানকে পৃথক আটটি কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করেছে এনবিআরের আওতাধীন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। আটটি নোটিসে প্রায় সাত কোটি ছয় লাখ টাকার কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রযোজ্য শুল্ককর দুই কোটি ৫১ লাখ টাকা। নোটিসে যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে হ্যানজী কাঁচামাল বিক্রি করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকেও শুনানিতে ডাকা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এর আগেও প্রায় ৮২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ পেয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জিসান গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হ্যানজী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড ২০১১ সালে বন্ড লাইসেন্স পায়। আদমজী ইপিজেডের ১২২ নম্বর প্লটে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ইতোমধ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে এনবিআর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটকে নির্দেশ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বন্ড কমিশনারেট প্রিভেন্টিভ দল গঠন করে। প্রিভেন্টিভ দল চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি হ্যানজী পরিদর্শন করে। এতে বন্ড অনিয়মের তথ্য পায়। পরে প্রতিষ্ঠানটি পৃথক আটটি নোটিস জারি করে।
প্রথম নোটিসে বলা হয়, হ্যানজী প্রিভেন্টিভ দলকে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ফারিহা নিট টেক্স লিমিটেডের কাছে প্রায় ৯৯ লাখ ৩২ হাজার টাকার কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে। কিন্তু বন্ড কমিশনারেট তথ্য পায়, হ্যানজী থেকে ফারিহা নিটের ক্রয় করা এসব কাঁচামাল বন্ড রেজিস্টারে ইন-টু-বন্ড করা এবং পরে ইউপি গ্রহণের মাধ্যমে রফতানির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে হ্যানজী ডুপ্লেক্স রফতানি হয়েছে, তথ্যটি সঠিক নয়। এক্ষেত্রে হ্যানজী ও ফারিহা নামে দুটি প্রতিষ্ঠান পরস্পর যোগসাজশের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এতে হ্যানজীর পাশাপাশি ফারিহা নিট টেক্স লিমিটেডকে শুনানিতে ডাকা হয়।
একইভাবে দ্বিতীয় নোটিসে বলা হয়, মিরপুর রূপনগর এলাকার মহসিন বক্স অ্যান্ড কার্টন ইন্ডাস্ট্রির কাছে প্রায় দুই কোটি ৯২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে। একইভাবে দেখা যায় হ্যানজী ডুপ্লেক্স রফতানির তথ্যটি সঠিক নয়। মহসিন বক্স অ্যান্ড কার্টন ইন্ডাস্ট্রিকে শুনানিতে ডাকা হয়।
তৃতীয় নোটিসে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুর সদরের মির্জাপুর এলাকার কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেডের কাছে প্রায় ছয় লাখ ১১ হাজার টাকার কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে। কিন্তু বন্ড কমিশনারেট তথ্য পায় রফতানির তথ্য সঠিক নয়। কেডিএস এক্সেসরিজ লিমিটেডকে শুনানিতে ডাকা হয়েছে। চতুর্থ নোটিসে বলা হয়, গাজীপুর সদরের মির্জাপুর এলাকার আল আরাফা প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছে প্রায় ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকার কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে। কিন্তু বন্ড কমিশনারেট দেখতে পায় রফতানির তথ্য সঠিক নয়। ফলে আল আরাফা প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডকে শুনানিতে ডাকা হয়।
পঞ্চম নোটিসে বলা হয়, গাজীপুরের কেবি বাজার এলাকার গোল্ডেন ক্রাউন প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছে প্রায় ৬৮ লাখ ৪১ হাজার টাকার কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে। কিন্তু বন্ড কমিশনারেট দেখতে পায় রফতানির তথ্য সঠিক নয়। ফলে গোল্ডেন ক্রাউন প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডকে শুনানিতে ডাকা হয়। ষষ্ঠ নোটিসে বলা হয়, গাজীপুরের সাভার আশুলিয়া এলাকার জাদিদ লেভেলস লিমিটেডের কাছে প্রায় ৬৮ লাখ ৪১ হাজার টাকার কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে। কিন্তু বন্ড কমিশনারেট দেখতে পায় রফতানির তথ্য সঠিক নয়। ফলে জাদিদ লেভেলস লিমিটেডকে শুনানিতে ডাকা হয়।

সপ্তম নোটিসে বলা হয়, কুড়িল বাড্ডা এলাকার নিক্সন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে প্রায় ১২ লাখ ২৪ হাজার টাকার কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে। কিন্তু বন্ড কমিশনারেট দেখতে পায় রফতানির তথ্য সঠিক নয়। ফলে নিক্সন ইন্ডাস্ট্রিজকে শুনানিতে ডাকা হয়। অষ্টম নোটিসে বলা হয়, গাজীপুর সদরের এসার পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে প্রায় এক ৯৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার কাঁচামাল (ডুপ্লেক্স বোর্ড) রফতানি করেছে। কিন্তু বন্ড কমিশনারেট দেখতে পায় রফতানির তথ্য সঠিক নয়। ফলে এসার পেপার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে শুনানিতে ডাকা হয়।
এনবিআর সূত্র জানায়, আটটি নোটিসে মোট সাত কোটি ছয় লাখ ৪১ হাজার ৭১১ টাকার কাঁচামাল অপসারণ করা হয়েছে। তিনটি মামলায় যার মধ্যে শুল্ককর প্রায় দুই কোটি ৫১ হাজার টাকা। হ্যানজী যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে কাঁচামাল বিক্রি করেছে বলে দাবি করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকেও শুনানিতে ডাকা হয়েছে। হ্যানজীর পক্ষ থেকে কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একবার শুনানি হয়েছে। বর্তমানে বিচারাদেশের পর্যায়ে রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, হ্যানজীর বিরুদ্ধে এর আগেও ৮২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বন্ড কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রির তথ্য উদ্ঘাটন করেছে বন্ড কমিশনারেট।
এ বিষয়ে জিসান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহাব উদ্দিন খান মঙ্গলবার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কাঁচামাল সরানো হয়নি। যেসব কাঁচামালের কথা বলা হয়েছে, তা ওয়েস্টেজ। আমরা জবাব দিয়েছি।’ হ্যানজীর হেড অব অপারেশন শহিদুল্লাহ কায়সার গতকাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়নি। যেসব দাবি করা হয়েছে, তার কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে, শুনানি হয়েছে। কাঁচামাল মেশিনে বিভিন্ন সাইজ করতে গিয়ে ওয়েস্টেজ হয়েছে।’