নিজস্ব প্রতিবেদক: উন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-৭-এর এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাপানে। ১৯ মে শুরু হয়ে সম্মেলন শেষ হবে ২১ মে। বিশ্বে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুত প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের খুব সামান্যই দেয়া হচ্ছে। ফলে উন্নয়নশীল এসব দেশের জলবায়ু সংকট মোকাবিলা হুমকিতেই থেকে যাচ্ছে।
রাজধানীর শেরাটন হোটেলে গতকাল বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘জি-৭ সামিট-কল ফর গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস ফর এনডিং সাপোর্ট ফর ফসিল ফুয়েলস অ্যান্ড এক্সিলারেট দ্য ট্রানজিশন টু রিনিউয়েবল এনার্জি’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
গোলাম মোয়াজ্জেম তার প্রবন্ধে বলেন, জি-৭ সামিটকে কেন্দ্র করে এসব দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক শেষ হচ্ছে। তারা জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। সংকট মোকাবিলায় এখনই উদ্যোগ নেয়া দরকার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জাতীয়ভাবে প্রতিশ্রুত অবদান (এনডিসি) যে মাত্রায় প্রতিপালন হওয়ার কথা ছিল, তা থেকে সরে যাচ্ছে অধিকাংশ দেশ। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে অর্থায়নে এখন সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে। কয়লা থেকে বেরিয়ে আসতে উন্নত দেশগুলো আরও সময় চাইছে। প্রযুক্তির দিক থেকে জি-৭ দেশগুলো আরও উন্নত প্রযুক্তি হাতে নিয়েছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে (জিসিএফ) তাদের বছরে যে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তারা তা দিচ্ছে না। অথচ জলবায়ু খাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এখন বিশ্বব্যাপী বছরে ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
ড. মোয়াজ্জেম আরও বলেন, সংকট মোকাবিলায় এখন বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো দেশের ব্যাংকগুলো এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আগে তাদের বাধাগুলো সামনে আনছে। জ্বালানি দক্ষতায় এখন প্রচুর বিনিয়োগ দরকার।
ফাহমিদা খাতুন তার বক্তব্যে বলেন, জি-৭ সামিটের বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যেমনÑগ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর ঘটানো ইত্যাদি। কিন্তু এসব বিষয় কীভাবে অর্জন করা সম্ভব হবে, তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। এ সামিটে উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের দাবি তুলে ধরার সুযোগ পায়।
সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়, জি-৭ সামিট থেকে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ সাধারণত জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বড় অঙ্কের অর্থায়নসহ বিভিন্ন নীতি সহায়তা আশা করে। এসব উন্নত দেশগুলোর উচিত জীবাশ্ম জ্বালানি ও এলএনজিতে বিনিয়োগ বন্ধ করা। এলএনজিও কার্বনভিত্তিক জ্বালানি হওয়ায় এর বিনিয়োগ বন্ধ হওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট (আইএফআই) থেকে আরও বেশি অর্থায়ন আনা। কপ-২৬ এ গঠিত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড, আইএমএফের রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট ও ক্লাইমেট ফাইন্যান্স টাস্কফোর্স থেকে অর্থ আনা জরুরি।
সে ডার এনার্জি এফিসিয়েন্সি ও কনজারভেশন সেলের পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সরকার জি-৭ সামিটে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব রাখবে। জ্বালানি দক্ষতা, প্রযুক্তিগত সহায়তা তারা কীভাবে দেবে তার ওপরও আলোচনা হতে পারে।
সংসদ সদস্য তানভির শাকিল জয় বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। তবে পরিকল্পনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যাতে মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত না হয় সেদিকেও নজর রাখছি আমরা।