জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় প্রভাব পড়ছে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ কারণে উদ্বিগ্ন দেশটির ব্যবসায়ীরা। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয় যুক্তরাজ্যে। এ সময় ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচ দশমিক চার শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে দেশটিতে। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।

দ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ড আশা করছে, আগামী এপ্রিলের মধ্যে ভোক্তামূল্য সূচক ছয় শতাংশ বাড়বে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি ও ওমিক্রনের কারণে ২০২২ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হবে।

মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পক্ষে এপ্রিলে পরিবর্তন আনতে যাওয়া ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কেননা ছোট-বড় সব ব্যবসায় খরচ বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ দেখিয়েছেন।

‘তিন মাসের মধ্যে জ্বালানির খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হওয়া  ভীতিকর,’ বলেন গ্লাসগোর ওভেনবার্ড কফির স্বত্বাধিকারী অ্যাঙ্গেলেত্তি। তিনি ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার কথা চিন্তা করছেন, অথচ কভিড-১৯ মহামারির আগে তিনি স্থানীয় সব হাসপাতালে বিনা খরচে কফি সরবরাহ করতেন। জ্বালানির পেছনে গত বছর  প্রতি মাসে  তিনি ৫০০ পাউন্ড খরচ করতেন, বর্তমানে যা বেড়ে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ পাউন্ড হয়েছে।

জ্বালানির পাশাপাশি ইউরোপজুড়ে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। যেমন ব্রেক্সিটের আগে এক বস্তা র’ কফির দাম ছিল ৯০ পাউন্ড, যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ৩৫০ পাউন্ড। এর অর্থ ব্যয়ভার বহন করার জন্য অ্যাঙ্গেলেত্তির মতো ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে তাদের কর্মীদের বেতনভাতা কমাতে হবে। তবে মানবিক কারণে সে পথে হাঁটতে চান না অনেক প্রতিষ্ঠানমালিক। এর পরিবর্তে এসএমই খাতের উন্নয়নে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা দেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা। এ খাতের উন্নয়নে সরকারের সহায়তা বাড়ানো দরকার বলে জানান তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, যুক্তরাজ্যের ভোক্তারাও বুঝতে পারছেন, সবকিছুর দাম বেড়েছে। তবে মহামারির অবসান হলে তারা অসন্তুষ্ট হতে পারেন। কেননা প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। ডার্বির কে অ্যান্ড হ্যাডক কনস্ট্রাকশন ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা টিম হ্যাডক বলেন, এক সপ্তাহ আগে বেকিং প্লাস্টার কিনি আট পাউন্ড দিয়ে, বর্তমানে এর দাম ১১ পাউন্ড হয়েছে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া উদ্বেগজনক। তাদের ধারণা ছিল, মহামারিতে অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়িকে নতুন রূপ দেবেন, কিন্তু এখনও তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাজ্যের একমাত্র ফাইবার গ্লাসনির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিপ্পন ইলেকট্রিক গ্লাসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর স্টিভ কিটন ধারণা করেছিলেন, ২০২১ সালে ফাইবার গ্লাসের উৎপাদন বাড়বে। তার প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টারা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হতাশ হতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের ধারণা ছিল, তেলের দাম বাড়বে, তবে শিগগির কমেও আসবে। সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি বলা চলে। তেলের দাম না বাড়লে বছরটি বেশ ভালো কাটত তাদের। ফাইবার গ্লাস ইউরোপজুড়ে উইন্ডমিল ও অটোমোটিভ শিল্পের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে। ইংল্যান্ডের উইগানে তাদের একটি কারখানায় ৩৫০ কর্মী কাজ করছেন।

কিটন বলেন, আমি মনে করি কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা উচিত নয়। এর পরিবর্তে সঠিক ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের  পাশে  থাকা উচিত। তাই আমি মনে করি, তারা এমন পরিবেশ তৈরি করবে, যাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাফল্যের মুখ দেখে। এর অর্থ সরকারে স্থিতিশীল ও সহনশীল জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং এজন্য অবকাঠামোগত সহায়তা দিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০