জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মচ্ছবে উল্টো রথে পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ডিজেলের দর বেড়েছে ২৩ শতাংশ। বাস ভাড়া বেড়েছে ২৭ শতাংশ। লঞ্চ ভাড়া বেড়ে গেছে ৩৫ শতাংশের বেশি। এলপিজির দাম বেড়েছে চার দশমিক ২৯ শতাংশ। একইভাবে বেড়েছে চাল, ডাল ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর। সবজির বাজারেও চলছে অস্থিরতা। ফলে মাথাপিছু আয় ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ (২২২৭ থেকে বেড়ে ২৫৫৪ ডলার) বাড়লেও নিত্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। চলছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মহোৎসব। উল্টো চিত্র শুধু পুঁজিবাজারে। দর বৃদ্ধির বদলে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে  শেয়ার ও ইউনিটদর। ফলশ্রুতিতে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে বিনিয়োগকারীদের কপালে।

বর্তমানে পাইকারি বাজারে মোটা চাল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা আর সরু চাল ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় পাওয়া গেলেও মসুর ডালের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এ মুহূর্তে কম বেশি কেজিপ্রতি প্রায় ১২০ টাকা দাম মসুরের ডালের। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ টাকায়, যা দুই মাস আগেও ছিল সাড়ে ৫০০ টাকার মতো।

আবার আটার দাম এক মাসে বেড়েছে কেজি প্রতি সাত টাকা, চিনির দাম বেড়ে ওঠানামা করছে ৭৫ থেকে ৮১ টাকার মধ্যে। পেঁয়াজের দাম এই বাড়ছে, এই কমছে করেও গত দুই মাসে ৪৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। এসব পণ্য ছাড়াও ডিম, মুরগি ও গরুর মাংসের দামের পাশাপাশি বেড়েছে নানা ধরনের সবজি ও মাছের দামও। কিন্তু পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ শেয়ারদর এখনও তুলনামূলক কম থাকলেও বাড়ছে না এর দর। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে লাভের আশায় প্রতিনিয়ত লোকসানের হিসাব করেই খুশি থাকতে হচ্ছে তাদের।

এ প্রসঙ্গে অসীম কুমার কুণ্ডু নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘শেয়ার ব্যবসা করেই আমাকে সংসার চালাতে হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সংসার চালানোর খরচ আরও বেড়ে গেছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে দেখতে হচ্ছে উল্টো চিত্র। প্রতিনিয়ত শেয়ারদর কমছে। সম্প্রতি যে শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করেছিলাম সেসব শেয়ারের দর ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। ফলে পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি।’

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিনিয়োগকারী বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের আশার বাণী শুনে পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করে উল্টো চিত্র দেখতে হচ্ছে। একদিকে পুঁজিবাজারে নিত্য লোকসান দিতে হচ্ছে, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। সব মিলে আমাদের অবস্থা খুবই করুণ।

এক বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজার ইতিবাচক প্রবণতায় থাকলেও সম্প্রতি হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া এর চিত্র বদলে যায়। একযোগে কমতে শুরু করে তালিকাভুক্ত প্রায় সব শেয়ার ও ইউনিটদর। যে কারণে কমতে শুরু করেছে বাজার মূলধন ও সূচক।

জানা গেছে, গত এক মাসে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটদর কমেছে প্রায় ছয় শতাংশ। এক মাস আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল পাঁচ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। গতকাল যার পরিমাণ এসে দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকায়। যদিও দুই কার্যদিবস পর গতকাল সূচক ও বাজার মূলধন বাড়তে দেখা গেছে। এদিকে গত এক মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচকও উল্লেখযোগ্যহারে কমে যেতে দেখা গেছে। এ সময় সূচক কমেছে সাড়ে ছয় শতাংশের বেশি।

তবে পুঁজিবাজারের এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের বাজারে মানিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দীর্ঘদিন বাজার ভালো থাকার কারণে এখন কিছুটা দর সংশোধন চলছে। পাশাপাশি পেনিক হয়ে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়া বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী অল্পতে ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। তারা ভীত হয়ে লোকসানে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দেন। এটা ঠিক নয়। এতে তাদেরই আর্থিক ক্ষতি হয়।

এদিকে দর সংশোধন চলছে এমন মন্তব্য মেনে নিতে পারছেন না পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট অনেকে। জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকাজের হাউসের কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, দর সংশোধনের বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এক বা দু’দিন হলে তাকে বাজার সংশোধন বলে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু  প্রতিনিয়ত দরপতনকে কোনোভাবে দর সংশোধন বলে আখ্যায়িত করা যায় না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০