Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 10:23 pm

জীবন বাঁচাতে ও জীবন সাজাতে স্কয়ার

সমবায় নিয়ে কাজ করেছেন স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী। বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন কৃষিতেও। বিদেশী পণ্যের প্রতি বাংলাদেশীদের ঝোঁক একটু বেশিই। সেটিকে পাশ কাটিয়ে এখন ধনী-গরিব সব মানুষের পণ্য হয়ে উঠেছে স্কয়ার

স্কয়ারের পণ্য ব্যবহার করেননি এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। স্কয়ারের কোনো সেবা নেননি এমন মানুষও হয়তো পাওয়া যাবে না দেশে। স্কয়ার উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানিও হচ্ছে কয়েক দশক ধরে।

নামকরা এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পথচলা শুরু ১৯৫৮ সালে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেমন চলেছে, তেমনি সময়ের চেয়ে এক ধাপ এগিয়েও থেকেছে। প্রতিনিয়ত তাই উন্নত ও প্রসারিত হচ্ছে কার্যক্রম। ফার্মাসিউটিক্যালস দিয়ে কাজ শুরু করে এখন টেক্সটাইলস, টয়লেট্রিজ, কনজিউমার পণ্য, ইনফরম্যাটিকস, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যাংক, ফাইন্যান্স, মিডিয়া, মুদ্রণ, বিমা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে স্কয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজ। তাই ‘জীবন বাঁচাতে এবং জীবন সাজাতে’ সবই রয়েছে স্কয়ারের দুনিয়ায়।

প্রতিষ্ঠানটির সফলতার পেছনের মানুষটি স্যামসন এইচ চৌধুরী। তিনি ছিলেন স্কয়ারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের আরুয়াকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। মেডিকেল অফিসার ইয়াকুব হোসেন চৌধুরী ও গৃহিণী লতিকা চৌধুরীর প্রথম সন্তান। বাবার চাকরির সুবাদে তার ছেলেবেলা কেটেছে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে। ১৯৩০ সালে চাঁদপুরের এক মিশন স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। বাবা তখন চাঁদপুর মিশন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হয়ে বদলি হয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে মা-বাবাকে না জানিয়ে রয়েল ইন্ডিয়ান নেভিতে যোগ দেন। পরে ১৯৪৭ সালে ডাক বিভাগে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শুরু করেন। সেই একই বছরের ৬ আগস্ট বিয়ে করেন অনিতা বিশ্বাসকে। ১৯৫২ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে বাবার পরামর্শে হোসেন ফার্মেসি চালানো আরম্ভ করেন। ১৯৫৮ সালে পাবনার আতাইকুলা গ্রামে চার বন্ধু মিলে স্থাপন করেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। বাকিটুকু ইতিহাস। তার উদ্ভাবনীশক্তি, নেতৃত্বগুণ ও অধ্যবসায়ের পাশাপাশি নীতিবোধ, ত্যাগ, মহানুভবতা ও সেবামূলক কর্মকাণ্ডের ফলে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে স্কয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজ।

১৭ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হয় স্কয়ারের কার্যক্রম। শুরুর তিন বছর কোনো লাভের মুখ দেখেনি এ প্রতিষ্ঠান। এ কারণে বিনিয়োগের মাত্রা আরো একটু বাড়ান চার বন্ধু। চতুর্থ বছরে কিছুটা লাভ হয়। আশির দশকে নতুন ওষুধনীতি আশীর্বাদ হয়ে আসে স্কয়ারের জন্য। সে সুবাদে ক্রমে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানির মর্যাদা লাভ করে এটি। সেই থেকে আজও ওষুধশিল্পে শীর্ষ স্থানটি স্কয়ারের। নব্বইয়ের শুরুতে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে বাজারে শেয়ার ছাড়ে স্কয়ার। ১৯৯৮ সালে আইএসও-৯০০১ সনদ লাভ করে।

চার অংশীজনের সমান মালিকানায় শুরু হয় বলে স্কয়ারের লোগোও বর্গাকৃতির। ব্যবসা মানে কেবল মুনাফা নয়, গুণগতমানেরও এর সঠিক উদাহরণ স্কয়ারের সব পণ্য। গুণগতমান বিচারে প্রতিষ্ঠানটির সব পণ্যই সেরা। নিয়মিত গবেষণা, উন্নয়ন ও কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। এ কোম্পানির প্রায় আশি শতাংশই হোয়াইট কালার জব।

স্বাধীনতার পর দেশ গঠনে বাংলাদেশ ইকুমেনিক্যাল রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সার্ভিসেস বা বিইআরআরএস গঠন করা হয় স্কয়ারের উদ্যোগে। বিইআরআরএসের বর্তমান নাম খ্রিস্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ বা সিসিডিবি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে চলেছে এ প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে ত্রাণ, পুনর্বাসন, পুনর্গঠন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষাদান, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি প্রভৃতি সেক্টরে কাজ করে করে সিসিডিবি। কৈননিয়া এনজিও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ছত্রিশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে স্কয়ার, বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। সব কর্মীর জন্য আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা, বোনাস চালু রয়েছে স্কয়ারে। এখনও তা ধরে রেখেছে যত্নের  সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা হয়, তাদের চাহিদা পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাই আজ পর্যন্ত স্কয়ারের কোনো প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের কর্মবিরতি হয়নি।

সমবায় নিয়ে কাজ করেছেন স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা। বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন কৃষিতেও। বিদেশী পণ্যের প্রতি বাংলাদেশীদের ঝোঁক একটু বেশিই। সেটিকে পাশ কাটিয়ে ধনী-গরিব সব মানুষের পণ্য হয়ে উঠেছে স্কয়ার।