পলাশ শরিফ: উদ্যোগ নেওয়ার পাঁচ বছর পর চূড়ান্ত হলো জীবন বিমা গ্রাহকদের নিরাপত্তা তহবিলের প্রবিধান। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত প্রবিধানের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ হয়েছে। বিমা গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণের জন্য ‘নিরাপত্তা তহবিল’ গঠন করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কোনো জীবন বিমা কোম্পানি দেউলিয়া হলে এ তহবিল থেকেই জীবন বিমা গ্রাহকদের দায় পরিশোধ করা হবে। দেরিতে হলেও এ তহবিল বিমা গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন বিমা খাতের দায়িত্বশীলরা।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে প্রণীত বিমা আইনের ১৫৬ ধারায় দেওয়া নির্দেশনা মেনে জীবন বিমা গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষায় ২০১২ সালে উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। যার জন্য একটি প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য জীবন বিমা কোম্পানির মালিক পক্ষ ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স গ্রাহক নিরাপত্তা তহবিল’ গঠনের জন্য একটি প্রবিধানের খসড়া তৈরি করে আইডিআরএ। এরপর দফায় দফায় ভেটিং-সংশোধন শেষে গত বছরের নভেম্বরে চূড়ান্ত হয় প্রবিধান। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল বহুল প্রত্যাশিত ওই প্রবিধানের খসড়া গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। গেজেট বাস্তবায়নের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে সরকার, জীবন বীমা করপোরেশন, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও বিমা কোম্পানির মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) মনোনীত প্রতিনিধিরা কমিটিতে স্থান পাবেন।
প্রবিধানের তথ্যানুযায়ী, কোনো কারণে বিদ্যমান জীবন বিমা কোম্পানি দেউলিয়া হলে কিংবা অবসায়নের ঘটনা ঘটলে জীবন বিমা গ্রাহকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তাই গ্রাহকদের সুরক্ষার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তা তহবিল গঠন করা হবে। জীবন বিমা কোম্পানির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ওপর নির্দিষ্ট হারে ধার্য করা (লেভি) চার্জ থেকে এ নিরাপত্তা তহবিলে অর্থের জোগান দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ নিরাপত্তা তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
চার্জ আদায় সম্পর্কে প্রবিধানে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে জীবন বিমা কোম্পানির প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের ওপর চার্জের হার নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত চার্জ পরবর্তী বছরের জুনের মধ্যে এককালীন অথবা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে চার্জ পরিশোধের জন্য আবেদনসাপেক্ষে নির্ধারিত সময়ের পরও তিন মাস সময় পাবে জীবন বিমা কোম্পানি। তারপরও চার্জ পরিশোধ করা না হলে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে আইডিআরএ। এমনকি কোনো কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল কিংবা স্থগিত হলে নির্দেশনা কার্যকরের আগে সর্বশেষ কার্যদিবস পর্যন্ত আদায় করা প্রথম বর্ষ প্রিমিয়ামের ওপর নির্ধারিত চার্জ জমা দিতে হবে। অন্যদিকে তহবিলের আকার বিবেচনায় নিয়ে চার্জ আদায়ের বিষয়টি নির্ভর করবে।
ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া ও তহবিলের অর্থ ব্যয় সম্পর্কে প্রবিধানে আরও বলা হয়েছে, তহবিল পরিচালনা ও জীবন বিমা গ্রাহকদের দাবি পরিশোধের জন্যই তহবিলের অর্থ ব্যবহƒত হবে। তবে কোনো জীবন বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা, পরিচালক কিংবা সহযোগী-অধীনস্থ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অবসায়িত কোম্পানির দায় পরিশোধে এ অর্থ ব্যবহার করা যাবে না। আর চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দেউলিয়া বা অবসায়িত জীবন বিমা কোম্পানির ক্ষতিগ্রস্ত বিমা গ্রাহকদের বিমা দাবি নিরূপিত হওয়ার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে যাবতীয় কাগজপত্রসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দেওয়া নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরবর্তী এক বছরের মধ্যেই দাবি পরিশোধ করা হবে।
এ বিষয়ে আলাপকালে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রতিকূল ব্যবসায়িক পরিস্থিতি, বাস্তবতা উপেক্ষা করে নতুন কোম্পানির লাইসেন্স প্রদান ও বিমা খাতে ব্যবসায়িক মন্দাবস্থার কারণে কোম্পানিগুলো টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণেœর শঙ্কা থেকেই যায়। সেজন্যই জীবন বিমা গ্রাহকদের জন্য নিরাপত্তা তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল আইডিআরএ। গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াটি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। তহবিল গঠিত হলে গ্রাহকরাই তার সুফল পাবেন। যাই ঘটুক, তাদের স্বার্থ অক্ষুণœ থাকবে।’
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বিমা আইন প্রণয়নের পর ওই আইন বাস্তবায়নে সময়োপযোগী প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। বিমায় শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত প্রবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দফায় দফায় সংশোধন-ভেটিংয়ের জেরে এখনও দুই-তৃতীয়াংশ প্রবিধানই ঝুলে আছে।