জুনের ১০ দিনেই হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার বাইরে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও সারাদেশের সব হাসপাতাল ডেঙ্গুরোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংশোধিত গাইডলাইন প্রত্যেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালগুলোর চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক ও ওষুধসহ সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে।’

ডেঙ্গু পরীক্ষার বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ‘যারা আমাদের কাছে আসছেন, তাদের ডায়াগনোসিস করা হচ্ছে। যারা আসছেন না, তাদের তো করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। গণমাধ্যমসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। জ্বর হলে তারা যেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করান।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক বিভাগে ডেঙ্গু চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মশা নিধন করাটা সব থেকে জরুরি।’ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে প্রত্যেক হাসপাতালে মশারি সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে রোগীরা মশারির ভেতর থাকছেন না বলেও জানান তিনি।

ডেঙ্গু রোগীদের সব তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য ও ডেঙ্গুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রোগীদের তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোকে আগত রোগীদের মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু ব্রিফিংয়ের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন থেকে রাজধানীর ৫৩টি ডেডিকেটেড হাসপাতালের সঙ্গে আরও ৩২টি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৮৫টি হাসপাতালের তথ্য তুলে ধরা হবে।’

উল্লেখ্য, কয়েক দিন ধরে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর বিস্তার। এ বছর এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিন হাজার। এই রোগীদের এক-তৃতীয়াংশই ভর্তি হয়েছেন জুনের প্রথম ১০ দিনে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৯ জনই মারা গেছেন এ সময়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৫৬ রোগী ভর্তি হয়েছেন।

এর আগে গত বুধবার ১৪৭ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ নিয়ে এ বছর সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল তিন হাজার ২১ জনে। তাদের ৯৯৯ জনই জুন মাসের রোগী।

গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যে ১৫৬ জন ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকায় ১৪৮ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে আটজন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৪৯ রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪৭৩ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে আছেন ৭৬ জন।

বর্ষার আগেই বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি হওয়ায় এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সতর্ক হওয়ার পরামর্শও এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন এবং মে মাসে এক হাজার ৩৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন এবং মে মাসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০