শেয়ার বিজ ডেস্ক: তুরস্কে বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি গত জুনে কিছুটা কমেছে, যা আসন্ন মাসগুলোয়ও অব্যাহত থাকবে বলে এক জরিপ অনুযায়ী আশা করা হয়েছে। তবে মাসিক রিডিংয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। খবর: ডেইলি সাবাহ।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক জরিপে ১১ অর্থনীতিবিদ অংশ নেন। চলতি সপ্তাহে তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত মে মাসে তুরস্কে মূল্যস্ফীতি ৩৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে কমে ৩৯ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমেছে। অর্থনীতিবিদদের আশা ছিল, দেশটির মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৩০ হতে পারে, যা কমে দাঁড়াতে পারে ৩৬ দশমিক ৩০ শতাংশে।
রয়টার্সের জরিপে দেখা যায়, জুনে মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাড়ে। এর আগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, ওই মাসে মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৫০ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে থাকতে পারে। বাস্তবে ঘটেছেও তাই। মূলত দেশটির মুদ্রা লিরার আরও এক ধাপ দরপতনের কারণে আলোচ্য মাসে মূল্যস্ফীতি বাড়ে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অন্য যেসব পণ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে রয়েছে, পেট্রোল ও দামি ধাতুর দাম বেড়ে যাওয়া। সেবা খাতের সব পণ্যের দামও ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া গাড়ি ও তামাকজাত পণ্যের দাম বেড়েছে।
এদিকে তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে খুচরা খাতে মাসের ভিত্তিতে জুনে দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ, বার্ষিক ভিত্তিতে যা ৫৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। ইস্তাম্বুল চেম্বার অব কমার্স (আইটিও) গত শনিবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
আইটিও জানিয়েছে, সাড়ে আট কোটি জনসংখ্যার তুরস্কে গত মাসে পাইকারি খাতে দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। বার্ষিক ভিত্তিতে দেশটিতে পাইকারি খাতে দাম বেড়েছে ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
গত ২৮ মে তুরস্কে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দেশটির অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মুদ্রানীতি শিথিল করা। নতুন মেয়াদে এরদোয়ান সরকার দেশটির অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করাকে সবচেয়ে প্রাধান্য দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশটির সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী মেহমেত সিমসেককে নতুন মন্ত্রিপরিষদের অর্থমন্ত্রী করেন এরদোয়ান। তার মন্ত্রিসভার গঠনের সময়, অর্থাৎ গত মাসে তুরস্কে মূল্যস্ফীতি ছিল ৪৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। এজন্য এরদোয়ান সরকারের সুদের হার কমিয়ে দেয়ার নীতিমালা দায়ী বলে মনে করা হয়। জানা গেছে, এরদোয়ান সরকারের এসব নীতিমালার বিরোধী ছিলেন অর্থনীতিবিদ সিমসেক। সিমসেক ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তুরস্কের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর তিনি উপপ্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তবে ২০১৮ সালে তুরস্কের মুদ্রা লিরায় ধস নামার আগে আগে তিনি পদত্যাগ করেন।
গত বৃহস্পতিবার দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে রেপো হার ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। লিরার মান বাড়াতে কাজ করছে অর্থনৈতিক কর্তৃপক্ষ।
লিরার অবমূল্যায়নের পেছনে অভ্যন্তরীণ পণ্যের দাম প্রভাব রেখেছে, যা আমদানিনির্ভর দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিয়েছে।
ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে অঙ্গীকার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে রয়টার্সের জরিপ অনুযায়ী, দেশটির বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। এর আগের এক জরিপেও বলা হয়েছিল, তুরস্কের মূল্যস্ফীতি ৩৮ দশমিক ৬০ থেকে ৫৫ দশমিক ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকবে।
২০২২ সালের জুলাইয়ে তুরস্কের মূল্যস্ফীতি নতুনভাবে বেড়ে ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়। এ সময় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশে। তাছাড়া ডলারের বিপরীতে লিরার পতনও অব্যাহত ছিল। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও পণ্যের মূল্য বেড়ে আকাশচুম্বী হওয়ায় দেশটির মূল্যস্ফীতিতে এমন প্রভাব পড়ে। জানা গেছে, তুরস্কে মূল্যস্ফীতির হার বাড়া শুরু হয় ২০২১ সাল থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০০ পয়েন্ট ভিত্তিতে সুদের হার কমানোর ফলে মূলত মূল্যস্ফীতি শুরু হয়।