শেয়ার বিজ ডেস্ক: নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়িয়েছে তুরস্ক। চলতি বছর জুনে রাশিয়ায় রপ্তানি বাড়িয়েছে দেশটি। খবর: আরটি।
তুরস্কের পরিসংখ্যান বিভাগের বরাত দিয়ে রাশিয়ার গণমাধ্যম আরটি জানায়, গত জুনে বার্ষিক ভিত্তিতে রাশিয়ায় তুরস্কের আমদানি ৪৬ শতাংশ বেড়ে ৭৯১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার পঞ্চম বৃহত্তম পণ্য সরবরাহকারী হওয়ার পথে এগিয়ে রয়েছে দেশটি। ২০২১ সালে তাদের অবস্থান ছিল ১০তম।
এ সময় তুরস্ক থেকে রাশিয়ায় জাহাজে ফলের চালান বেড়েছে। বিশেষ করে পিচ ও চেরির রপ্তানি বেড়েছে। জুনে ১৬৮ মিলিয়ন ডলারের ফল রপ্তানি করা হয়, যা ২০২১ সালের জুনের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেশি এবং ২০২২ সালের মে মাসের তুলনায় দ্বিগুণ। তাছাড়া এ সময় রাশিয়ায় মেশিনারি, ইকুইপমেন্ট ও ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানিও এর আগের মাসের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়েছে তুরস্ক। চলতি বছরের মে মাসে ৭৩ মিলিয়ন ডলারের এসব পণ্য রপ্তানি করা হলেও জুনে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০২ মিলিয়ন ডলারে। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।
ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম রপ্তানি ২৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ মিলিয়ন ডলারে। অটোমোবাইল ও যন্ত্রাংশ রপ্তানি ২৫ মিলিয়ন থেকে বেড়ে হয় ৩৪ মিলিয়ন ডলার। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয় ৪৮ মিলিয়ন ডলারের, এর আগের মাসে যা ছিল ৩৪ মিলিয়ন ডলার।
জাতিসংঘের বাণিজ্যবিষয়ক ডেটাবেজ কমট্রেডের তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে, ২০১০ সালের পর একক মাস হিসেবে রাশিয়ায় তুরস্কের জাহাজ চালান বেড়েছে। তবে ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে তুরস্ক থেকে মোট পণ্য রপ্তানির ২ দশমিক ৩ শতাংশ (২৯০ কোটি ডলার) যায় রাশিয়ায়। এ সময় মোট ১২ হাজার ৫৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে তুরস্ক। এ রপ্তানির বেশিরভাগ গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। তবে এ সময়ের মধ্যে রাশিয়া তুর্কি পণ্য আমদানির প্রধান গন্তব্য হয়ে ওঠে। গত ছয় মাসে তুরস্কের মোট আমদানির ১৬ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। এ সময় দুই হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে তুরস্ক। এই বাণিজ্যের ৬০ শতাংশ আসে তেল ও গ্যাস থেকে।
ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো। এ কারণে রাশিয়ার সঙ্গে অনেক দেশ আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। ইউক্রেন-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক দেশ থেকে আমদানি করতে পারছে না রাশিয়া। মে মাসে ইতালি, পোল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, চীন, বেলারুশ, জার্মানি, কাজাখস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অন্যতম সরবরাহকারী দেশ ছিল। বিশ্লেষকদের অনুমান, এই দেশগুলো রাশিয়ায় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ধরে রাখবে।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও বাড়ার ব্যাপারে আশাবাদী দুই দেশ। তাই তুরস্কের মুদ্রা লিরায় বাণিজ্য সম্প্রসারণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে মস্কো তুরস্কের স্থানীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য ও অন্য সেবা কিনতে পারবে। এতে কিছুটা হলেও মার্কিন ডলার ও ইউরোর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে রাশিয়া।
এদিকে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরে শস্যভর্তি ১৬টি জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বেশ কয়েকজন যুদ্ধবন্দি নিহত হওয়ার ঘটনায় নতুন উত্তেজনা শুরুর মধ্যে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত শুক্রবারের ওই হামলাকে কেন্দ্র করে শস্য রপ্তানি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে শনিবার বলা হয়েছে, জাহাজগুলো অবশ্যই রওনা করবে। দুই কোটি ৫০ লাখ টন শস্য আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের অন্যান্য দেশে পাঠানো হবে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত ২২ জুলাই মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে স্বাক্ষরিত শস্য রপ্তানি চুক্তির আওতায় শস্যগুলো পাঠানো হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম ইউক্রেন থেকে জাহাজে চালান ওঠানো হচ্ছে।