Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:08 pm

জুন থেকেই নতুন ভবনে অফিস করা যাবে

রহমত রহমান: সামনে সুপরিসর রাস্তা। রাস্তা পেরুলেই নজরে পড়বে দৃষ্টিনন্দন একটি ভবন। এটি দেশের রাজস্ব জোগানদানকারী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন ভবন। আধুনিক সুবিধা সংবলিত ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সব ঠিক থাকলে ৩০ জুনের পর নতুন ভবনে অফিস করা যাবে। প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে ভবনটি উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।

গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নিচতলা থেকে ১২ তলার কোনো না কোনো ফ্লোরে কাজ হচ্ছে। ভবনের নিচতলায় এস্কেলেটর বসানোর প্রস্তুতি চলছে। সুপরিসর এস্কেলেটর নতুন এই ভবনকে দৃষ্টিনন্দন করবে। এ এস্কেলেটর সবার জন্য উš§ুক্ত থাকবে। ভবনের সামনের দুটি লিফট বসানো হয়েছে। দুটি ইমার্জেন্সি লিফটসহ আরও ছয়টি লিফট বসানোর প্রক্রিয়া চলছে। কখনও এ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ইমার্জেন্সি এ দুটি লিফট ব্যবহার করা যাবে। পুরো ১২ তলা ভবনে টাইলসের কাজ শেষ। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সাবস্টেশন। এ ভবনের সবচেয়ে বড় সুবিধার দিকটি হলো কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। ভবনের নিচতলায় কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালুর জন্য বিশালকার কয়েকটি মেশিন বসানো হয়েছে। এছাড়া ভবনজুড়ে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ছাদে কুলিং ব্যবস্থা বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সিলিং বসানোর কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

দেখা গেছে, প্রতি তলায় রুমে চলছে ডেকোরেশনের কাজ। বেশিরভাগ অংশে কাজ লাগানোর কাজ শেষ। কাচ লাগানোর কাজ শেষ হলেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ট্রায়াল (পরীক্ষা) শুরু করা হবে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গাড়ি পার্কিংয়ে সাজানো হচ্ছে বেজমেন্ট। ভবনকে দৃষ্টিনন্দন করতে সামনে দুটি ফোয়ারা বসানো হবে। গাড়ি প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে পৃথক দুটি গেট। ভবনের সামনে তৈরি হচ্ছে একশ ফিটের সড়ক। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে প্রতিদিন বাড়তি শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনের প্রায় ৯৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সব ঠিক থাকলে জুনের মধ্যেই শতভাগ কাজ শেষ হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৯৭২ সালে সংবিধানের ৭৬ নম্বর আদেশে এনবিআর সৃষ্টি হয়। আর ৫০ বছরে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আহরণ বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার গুণ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কর রাজস্বের প্রায় ৯৭ শতাংশ ও মোট রাজস্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ রাজস্ব আহরণ করে এনবিআর। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা এনবিআর ৫০ বছর পর নতুন ভবন পাচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজস্ব ভবন প্রকল্পের পরিচালক ও কর অঞ্চল-১০-এর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম শেয়ার বিজকে বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। সে জন্য সব প্রকৌশলী, ঠিকাদার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। রাজস্ব ভবন হবে সরকারি ভবনগুলোর মধ্যে আধুনিক সুবিধা সংবলিত দৃষ্টিনন্দন ভবন।

অন্যদিকে, ২৮ ফেব্রুয়ারি এনবিআরের বোর্ড সভায় সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) শাহীন সুলতানা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন ভবন নির্মাণের অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন ভবনের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তবে ৩০ জুনের মধ্যে নতুন ভবনের শতভাগ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০ তলার আধুনিক ও নান্দনিক অফিস হবে জাতীয় রাজস্ব ভবন-১। তবে এখন ১২ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হবে। ভবিষ্যতে ২০ তলা করা হবে। এটি হবে কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সুবিধা-সংবলিত পরিবেশবান্ধব ভবন। এ ভবনে যেসব সুবিধা থাকবে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এ ছাড়া আটটি লিফট থাকবে, যার মধ্যে ছয়টি সাধারণ ও দুটি ফায়ার লিফট। রয়েছে ৫১০ আসনের মাল্টিপারপাস হল, রেভিনিউ আর্কাইভ, লাইব্রেরি, রেকর্ডরুম, সেন্ট্রাল ডেটা প্রসেসিং সেন্টার ও সার্ভার স্পেস। কম্পিউটার ল্যাব, ট্রেনিং সেন্টার, কমার্শিয়াল ব্যাংক শাখা, এটিএম, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, স্টেশনারি শপ, বার লাউঞ্জ, প্রতি তলায় গ্রিন স্পেস ও স্মোকিং জোন থাকবে। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় থাকবে সেবাকেন্দ্র, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, কল সেন্টার, বার লাউঞ্জ, ক্যাফেটেরিয়া, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, রেকর্ড রুম ও স্টেশনারি শপ। দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য থাকবে চলন্ত সিঁড়ি। তৃতীয় তলায় থাকবে মাল্টিপারপাস হল, এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান শাখা, ডে-কেয়ার সেন্টার, লাইব্রেরি ও রেভিনিউ আর্কাইভ। চতুর্থ তলায় অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর চেম্বার, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এবং এনবিআরের ছয় সদস্যের দপ্তর থাকবে। পঞ্চম তলায় থাকবে চেয়ারম্যান ও ১২ সদস্যের দপ্তর। ষষ্ঠ তলায় থাকবে বোর্ড প্রশাসন, সব প্রথম সচিব ও কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় সচিবের দপ্তর। সপ্তম তলা জুড়ে থাকবে দ্বিতীয় সচিবদের দপ্তর। অষ্টম তলায় কর পরিদর্শন পরিদপ্তর ও এনবিআরের আইসিটি শাখা থাকবে। নবম তলায় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর ও ভ্যাট) থাকবে। ১০ম তলায় আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল, ১১তম তলায় ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চল থাকবে। ১২তম তলায় আয়কর ও ভ্যাট আপিল দপ্তর থাকবে। দুটি বেজমেন্টে ২৪৬টি কার ও ১৭২টি মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের ২০ এপ্রিল আগারগাঁওয়ে তিন একর জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। পরে জটিলতায় কাজ শুরু হয়নি। ২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১২ তলা ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। শুরুতেই জমি অধিগ্রহণ ও দখল-সংক্রান্ত জটিলতায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হয়। শুরু হয় আইনি লড়াই। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ আদালতের নির্দেশে জমির দখল নেয় এনবিআর। কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালে ২০ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২০ তলার স্থলে ৩০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা করা হয়।