নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এটি অনেকটা উদ্বেগের বিষয়। কারণ এর ওপরই নির্ভর করে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্য। এ সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৭২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। সে সময় এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) এক পর্যবেক্ষণে এমনটি জানানো হয়েছে। গতকাল ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি এ পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ৭২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ২৩ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৩১৫ কোটি ডলার। তবে বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকলেও সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে প্রায় ১৯০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে।
মূলত রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমে যাওয়া ও প্রত্যাশার চেয়ে রফতানি আয় কম হওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে এমসিসিআইর পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে রফতানিতে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়নি বলে মনে করে এমসিসিআই। অন্যদিকে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ। পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা চলতি হিসাবে ঘাটতির অন্যতম কারণ। তবে আশার কথা হলো, এ সময় কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানি বেড়েছে। একইসঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময় দেশে মোট এফডিআই এসেছে ৭১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
এদিকে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ স্বল্পমেয়াদে ভালো ফল দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করে এমসিসিআই। সংগঠনটি জানায়, দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সমস্যার টেকসই সমাধানের বিষয়টি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এখনও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম বলে তারা জানায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে গত মাসে সরবরাহ ছিল ৭ হাজার ৫৪৭ মেগাওয়াট। আবার গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা যা ছিল, চলতি বছরের শুরুতে তা কিছুটা কমে গেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর দেশের সব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১৩ হাজার ১৫১ মেগাওয়াট। বর্তমানে এ সক্ষমতা ১২ হাজার ৫৪৭ মেগাওয়াট। তবে এ সক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।
সার্বিকভাবে এমসিসিআই মনে করে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ইতিবাচক ছিল। এ সময় অর্থনীতির প্রধান নির্দেশকগুলোর উন্নতি স্বাভাবিক ছিল। এ সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল স্থিতিশীল ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও ছিল স্থিতিশীল।
অর্থবছরের প্রথমার্ধে কৃষিখাতের অগ্রগতি ভালো ছিল বলে এমসিসিআই জানায়। তবে এ খাতের অগ্রগতি ধরে রাখতে সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আর অবকাঠামোর ঘাটতি এবং গ্যাস-বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ও কৃষির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য এসব বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে মনে করে এমসিসিআই।
সেবাখাত সার্বিকভাবে ভালো করলেও এ খাতে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করে এমসিসিআই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে সরকারের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে। সার্বিকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অবকাঠামো, জ্বালানি নিরাপত্তা, সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা, দক্ষ মানবসম্পদ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ।
Add Comment