Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:14 pm

জেএমআই থেকে বাড়তি দামে সিরিঞ্জ কিনছে সরকার!

আয়নাল হোসেন: আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে চড়া দামে বিপুল পরিমাণ অটো ডিজঅ্যাবল (এডি) সিরিঞ্জ কিনছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর এ সিরিঞ্জ সরবরাহ করছে জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠান। নি¤œ মানের মাস্ক ও সরবরাহের দায়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এ প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনও মামলা করে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধক টিকা দেয়ার জন্য তিন কোটি ৩০ লাখ এডি সিরিঞ্জ কিনছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সিরিঞ্জের প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে পাঁচ টাকা ৪০ পয়সা। পাঁচ কিস্তিকে এ সিরিঞ্জ সরবরাহের ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেসকে। প্রতি কিস্তিতে ৬৫ লাখ সিরিঞ্জ সরবরাহ দেয়ার আদেশ রয়েছে। এ সিরিঞ্জ কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। গত ২১ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসি অ্যান্ড এএইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত আদেশে জেএমআই সিরিঞ্জস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেডকে এ কার্যাদেশ দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস আলিবাবা ডটকম সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি একই মানের সিরিঞ্জের মূল্য এক সেন্ট থেকে চার সেন্ট। এতে প্রতিটি সিরিঞ্জের দাম পড়ে ৮৫ পয়সা থেকে তিন টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত। ২৫ শতাংশ মূসক ও কর যোগ করা হলে প্রতিটি সিরিঞ্জের দাম পড়ে এক টাকা ছয় পয়সা থেকে চার টাকা ২৫ পয়সা। এতে তিন কোটি ৩০ লাখ সিরিঞ্জ কিনতে সরকারের ব্যয় হতো তিন কোটি ৩৯ লাখ ৮০ হাজার থেকে ১৪ কোটি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ সরকার কিনছে ১৭ কোটি ৮২ লাখ টাকায়। অর্থাৎ সরকারের গচ্ছা যাচ্ছে তিন কোটি ৭৯ লাখ ৫০ থেকে ১৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা পর্যন্ত।

২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেড প্রতিটি ০.৫ এমএল এডি সিরিঞ্জের ট্রেড প্রাইস নির্ধারণ করেছিল চার টাকা ৫১ পয়সা। আর এক এমএল এডি সিরিঞ্জের মূল্য চার টাকা ১৪ পয়সা এবং তিন এমএল এডি সিরিঞ্জের মূল্য ধরা হয় চার টাকা ৫১ পয়সা।

তবে সিরিঞ্জ আমদানিকারকরা জানান, জেএমআই গ্রুপ ঔষধ প্রশাসনের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমানকে ম্যানেজ করে এডি সিরিঞ্জ আমদানি বন্ধ করে দেয়। এতে ভোক্তারা বেশি দামেই জেএমআইয়ের কাছ থেকে সিরিঞ্জ কিনতে বাধ্য হন। শুধু সিরিঞ্জই নয়, জেএমআই যেসব পণ্য উৎপাদন করত তা আমদানিতে বাধা দেয়া হতো।

বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইনস্ট্র–মেন্ট ডিলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সিরিঞ্জ আমদানিকারক জাভেদ আহমেদ বলেন, ০.৫ মিলির একটি এডি সিরিঞ্জ চীন থেকে আমদানি করা হলে সব ধরনের খরচসহ সর্বোচ্চ দাম তিন টাকার বেশি পড়বে না। শুধু জাভেদ আহমেদই নন, একাধিক আমদানিকারকের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশিদ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, দেশের একমাত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেএমআই থেকে সিরিঞ্জ কেনা হচ্ছে। তবে কেউ যদি জেএমআইয়ের চেয়ে কম দামে সিরিঞ্জ সরবরাহ করতে পারে, তাহলে পরবর্তীকালে সেখান থেকেই সিরিঞ্জ কেনা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরও সিরিঞ্জ প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।

গত বছর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনাভাইরাসে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়। আর করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দান ও রোগ নির্ণয় করতে গিয়ে রোগাক্রান্ত হন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের সুরক্ষায় এন-৯৫ মাস্কের জরুরি প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন সিএমএসডির মাধ্যমে নকল মাস্ক সরবরাহের অভিযোগ ওঠে জেএমআইয়ের বিরুদ্ধে। নকল মাস্ক সরবরাহ দেয়ার ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জেএমআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাককে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করেছিল। নকল ও অনুমোদনবিহীন এন-৯৫ মাস্ক তৈরি ও সরবরাহ করায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমানও মুন্সীগঞ্জের ড্রাগ আদালতে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের নামে একটি মামলা করেন। সম্প্রতি আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন আবদুর রাজ্জাক।

এ বিষয়ে জানার জন্য জেএমআই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাকের মুঠো ফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।