সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে মেঘনা গ্রুপের আমদানি করা চিনি নিয়ে ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়ে ছিল। এরপর নানা চেষ্টা করা হলেও ১০ মিটারের জাহাজ আর জেটিতে আনা যায়নি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বর্তমানে সাড়ে নয় মিটার ড্রাফট (পানির নিচে থাকা জাহাজের অংশ) এবং ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়তে পারে। প্রতিটি জাহাজ বহন করতে পারে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টিইউউএস কনটেইনার। লন্ডনের এইচআর ওয়েলিং পোর্ট নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর চ্যানেলে গবেষণার দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা বর্তমানে চ্যানেলের যে অবস্থা এবং জেটি যেভাবে রয়েছে তাতে বন্দরে ঠিক কত ড্রাফট এবং লেংথের জাহাজ ভেড়ানো যায়, বন্দরের দুই তীরের কী পরিমাণ জায়গা জেটি বা ইয়ার্ড সম্প্রসারণ কাজে ব্যবহার করা যায় এবং কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নিলে বন্দরে সর্বোচ্চ কত ড্রাফট এবং লেংথের জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে তার ওপর গবেষণা করে। গত এপ্রিলে তারা প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়। সম্প্রতি তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টে সংস্থাটি বন্দর চ্যানেল, কর্ণফুলী নদী এবং বন্দর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে। এতে বলা হয়, বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দরে এখনই ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লেংথের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। আগের চেয়ে বেশি ড্রাফটের জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার পাশাপাশি পণ্য পরিবহন খাতে সাশ্রয় হবে কোটি কোটি ডলার। কারণ দশ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়লে বন্দরে ৩৮০০ থেকে ৪ হাজার কনটেইনার পরিবহন করতে পারবে। হাইড্রোগ্রাফার বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বন্দরের ১৮টি জেটিতে একই ড্রাফট থাকবে না। তবে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) ১০ মিটার ড্রাফট দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া জেনারেল কার্গো বার্থের (জিসিবি) কয়েকটিতে ড্রাফট বাড়ানো যাবে। আর বন্দরের জিসিবির ২ থেকে ৮ নম্বর জেটিতে বর্তমানে সাড়ে ৮ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যায়। সেখানে ড্রাফট কিছুটা বাড়ানো গেলেও ১০ মিটার করা যাবে না। তবে ৯-১৩ নম্বর জেটিতে ড্রাফট ১০ মিটার করা সম্ভব হবে। তবে বহির্নোঙর ও গুপ্তখালের সন্নিকটের বাঁকে কিছুটা কাজ করে নদীর দু-একটি পয়েন্টে ড্রেজিং করলে বন্দর চ্যানেলে ১১ মিটার ড্রাফট ও ২২৫ মিটার লেংথের জাহাজও ভেড়ানো যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল চেয়ারম্যান বলেন, কর্ণফুলী নদীতে অনেক বাঁক আছে। এটি প্রাকৃতিক চ্যানেল। আগামী বছরের মধ্যে ১১ মিটারের জাহাজ জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হবে আশা করি। এর জন্য নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বে টার্মিনাল ও ব্রেক ওয়াটারের ডিজাইনের কাজ চলছে। এ প্রশস্ত চ্যানেলে ১২-১৩ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ২৪ ঘণ্টা অপারেশন করা সম্ভব হবে। আগামী অক্টোবরে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আগামী তিন বছরের এ জেটি নির্মাণ শেষ হবে। এতে ১৬-১৮ মিটারের গভীরতার জাহাজ এক লাখ টন ওজনের ধারণক্ষমতার ১০-১২ হাজার কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। বড় জাহাজে পণ্য আনা হলে ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা পাবে।